প্রথম যখন ফেসবকু (Facebook) নামক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটিকে পাবলিশ করা হয়েছিল তখন এটি শুধুমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে এবং অবসরে বিনোদনের কাজে লাগতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষের চাহিদা এবং প্রযুক্তির দুনিয়া উভয়ই ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।
যার দরুন ফেসবুক অধিকর্তা মার্ক জুকারবার্গ (Mark Zuckerberg) আলোচ্য প্লাটফর্মটিতে সময়ে সময়ে নতুন ফিচার সংযুক্ত করে যাচ্ছিলেন। যেই কারণে প্রায় দইু দশক পেরিয়ে আসার পর এখন ফেসবকু শুধুমাত্রই সময় অতিবাহিত করার মাধ্যম হিসাবে রয়ে যায়নি, বরং হয়ে উঠেছে একটি বিশেষ অনলাইন মার্কেটিং টুল (Marketing Tool)।
‘মার্কেটিং টুল’ বলার কারণ, আপনারা হয়তো অনেকেই দেখেছেন, ফেসবুকে মার্কেটপ্লেস (Market Place) নামক একটি সেকশন যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি আপনি যদি কোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের বিক্রেতা হন, তবে সেইসকল পণ্যকে ক্রেতাদের নাগালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ‘প্রমোশনাল অ্যাডভার্টাইজমেন্ট’ ফিচারও লঞ্চ করা হয়েছিল।
যার দরুন ছোট ছোট ব্যবসা গুলিও এই সুবিধাকে ব্যবহার করে বড় একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হতে পারে।
আর তাই অনেক ব্যবসায়িক সংস্থা এবং ব্র্যান্ড এখন ফেসবকুকে তাদের ব্যবসার গেটওয়ে বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর মধ্যে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছকু হচ্ছে।
আপনারা যারা এই বিষয়ে জানেননা তাদের জন্য আজ আমরা এই প্রতিবেদনে ফেসবকু মার্কেটিং কি (Facebook Marketing), এই সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাদি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো, যাতে এই ডিজিটাল পন্থা ব্যবহার করে আপনি আপনার ব্যবসাকে উন্নত করতে এবং ব্রান্ডে পরিণত করতে সক্ষম হন।
তবে মনে রাখবেন, ফেসবুকের দ্বারা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করার ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলির বিষয়ে আগের থেকে জেনে রাখতে হয়।
যেমন, ফেসবুক বিজ্ঞাপন (Facebook advertising), ফেসবুক পেজ প্রচার (Facebook page promotion), ফেসবুক ব্যবসা পেজ কি এবং কিভাবে তৈরি করে, ফেসবুকে মার্কেটিং স্ট্রাটেজি তৈরি করা, টার্গেটেড মার্কেটিং কিভাবে করতে হয়, ফেসবুক কনটেন্ট মার্কেটিং কি এবং কিভাবে করে এবং ফেসবুকের দ্বারা ব্র্যান্ড প্রচার কিভাবে করতে হয়।
সূচিপত্র:
ফেসবুক মার্কেটিং কি? (What Is Facebook Marketing in Bengali)
ফেসবুক মার্কেটিং সম্পর্কে জানার আগে আমাদের বুঝতে হবে ‘মার্কেটিং’ শব্দের অর্থ কি। ইংরেজি শব্দ ‘মার্কেটিং’ এর বাংলা অর্থ হলো বিজ্ঞাপন।
কোনো ব্যক্তি বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, তাদের নির্মিত প্রোডাক্ট বা সেবাকে বিক্রি করার লক্ষ্যে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাকে অর্থপ্রদানকারী ক্রেতাতে রূপান্তর করার যেই প্রক্রিয়া অবলম্বন করে তাকেই বিজ্ঞাপন বা মার্কেটিং বলা হয়।
মার্কেটিং দুপ্রকারের – ১) ট্রেডিশনাল এবং ২) ডিজিটাল।
ট্র্যাডিশনাল বা ঐতিহ্যগত মার্কেটিং পন্থা কি সেই সম্পর্কে কম-বেশি আমাদের প্রত্যেকেরই ধারণা আছে। তবে আবার ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে আমরা অনেকেই কিন্তু জানিনা।
এক্ষেত্রে – সার্চ ইঞ্জিন, ওয়েবসাইট, ইমেল, এসএমএস, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি অনলাইন প্লাটফর্ম গুলিকে ব্যবহার করে সম্ভাব্য ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা হলে সেই প্রক্রিয়াকেই ডিজিটাল মার্কেটিং বলা হয়। আর এই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অধীনেই পরে ফেসবকু মার্কেটিং।
ফেসবকু মার্কেটিং হল এমন একটি প্লাটফর্ম বা কৌশল যার মাধ্যমে একটি ব্যবসায়িক সংগঠন তাদের প্রোডাক্ট এবং পরিষেবা সম্পর্কে ফেসবকু ব্যবহারকারীদের সামনে তুলে ধরতে পারে। এক্ষেত্রে ফেসবকু মার্কেটিংয়ের অধীনে অর্গার্গনিক এবং পেইড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট উভয় বিকল্প অবলম্বনে সম্ভাব্য ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব।
আলোচ্য দটিু পন্থার সাহায্যে যত বেশি সংখ্যক টার্গেটেড অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে, তত বেশি পরিমাণ পণ্য নিশ্চিতরূপে বিক্রি করা যাবে। কেননা, ফেসবুকে এমনভাবে বিজ্ঞাপনগুলি দেওয়া হয়, যাতে অধিক সংখ্যক মানষেুষের কাছে তা দৃশ্যমান হয়।
একই সাথে সম্ভাব্য ক্রেতারা যাতে আগ্রহের বশে সেই পোস্ট গুলিতে ট্যাপ করতে বাধ্য হন, সেই দিকেও সমান ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় এই মার্কেটিং পন্থায়।
ফেসবকু মার্কেটিং কেন এতটা গুরুত্বপূর্ণ?
ফেসবকু মার্কেটিং তুলনামলূক কম খরচে বিস্তৃত পরিসরে – ব্র্যান্ডের প্রচারকার্যে সাহায্য করে।
একই সাথে, একটি কোম্পানি তাদের পণ্য বা পরিষেবার প্রচার করতে পোস্ট বস্টু এবং মার্কেটপ্লেস নামক ফিচারের মাধ্যমে কৌশলগতভাবে এগিয়ে যাওয়ার সুবিধাও পায়। আর এইসকল কারণবশতই বর্তমানে একাধি কোম্পানি গুলি নিজেদের ব্র্যান্ড নেম প্রতিষ্ঠা করতে ফেসবুক মার্কেটিংকে বেছে নিচ্ছেন।
এক্ষেত্রে আসুন একটি ব্যবসার বৃদ্ধিতে ফেসবুক মার্কেটিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে তা দেখে নেওয়া যাক।
১. গ্লোবাল নেটওয়ার্ক কভারেজ:
ফেসবুকের সাথে বর্তমানে ১.৫ বিলিয়ন ব্যবহারকারী সংযুক্ত রয়েছে। যার মধ্যে ৭ মিলিয়নেরও অধিক হল বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং কোম্পানি, যারা টার্গেটেড বা সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য বিজ্ঞাপন এবং বিপণন প্রচার অভিযান বা মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালাতে ফেসবুক মার্কেটিং নামের ডিজিটাল মার্কেটিং বিকল্পে সুবিধা নিয়ে থাকে।
কেননা, ফেসবুক এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যার সাহায্যে যে কোন ছোট বা বড় কোম্পানি বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের ক্রেতার সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে।
২. অর্গানিক রিচ বাড়াবে:
ফেসবুক মার্কেটিংয়ের সাহায্যে, ব্যবসায়িক সংস্থাগুলি তাদের ক্রেতাদের সাথে বিবিধ প্রকারের কন্টেন্ট শেয়ার বা বার্তালাপ চালানোর মাধ্যমে সর্বদা যোগাযোগ বজায় রেখে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলতে সক্ষম হয়।
আর ক্রেতারা যদি একবার একটি কোম্পানির প্রতি আগ্রহ দেখায় এবং তাদের পেজ লাইক করে, তবে তারা নিজেদের নিউজ ফিডে আপনা থেকেই সেই কোম্পানির প্রোডাক্ট বা পরিষেবা কেন্দ্রিক পোস্ট বারংবার দেখতে থাকবেন।
যার দরুন আপনি – একটা দৈনিক অডিয়েন্স এনগেজমেন্ট তৈরি এবং একই সাথে বৃহত্তর পর্যায়ে অর্গানিক কাস্টমার বেসের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারবেন।
৩. অন্যান্য মার্কেটিং প্ল্যাটফর্মের সাথে ইন্টিগ্রেট করা যায়:
ফেসবুক মার্কেটিং আপনাকে অন্যান্য মার্কেটিং চ্যানেল, যেমন – মোবাইল মার্কেটিং, ই-মেইল মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং ইত্যাদির সাথে সংযুক্ত হওয়ার মাধ্যমে নিজের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের প্রচার করতে দেয়।
আরো সোজা ভাবে বললে, এই বিশেষ সুবিধার কারণে যেকোনো কোম্পানি মেটামালিকাধীন এই প্লাটফর্মের সাথে ইন্টিগ্রেট একাধিক মার্কেটিং চ্যানেলের সাথে সংযুক্ত হয়ে তাদের ব্র্যান্ডের আউটরিচ বাড়াতে সক্ষম হবে।
৪. পেইড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট পরিচালনা:
অর্গানিক অডিয়েন্স বেস বাড়ানোর পাশাপাশি, ফেসবুক মার্কেটিং কাস্টমার টার্গেট এবং ট্রাফিক বদ্ধিৃ করার জন্য পেইড অ্যাডভার্টাইজমেন্ট পরিচালনা করতে দেয়।
এই বিকল্পের অধীনে আপনি – ক্রেতার বয়স, লিঙ্গ, অবস্থান বা ডেমোগ্রাফিক ডেটার (জনসংখ্যাগত ডেটা) উপর ভিত্তি করে টার্গেটেড অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে এবং নিজের প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের প্রচার করার সুযোগ পাবেন।
৫. অটোমেটেড টুল ফাংশন:
ফেসবুক মার্কেটিংয়ের অধীনে বিভিন্ন প্রকারের টুল গুলি আছে, যা কোম্পানিগুলিকে তাদের প্রচার অভিযান পরিচালনায় সাহায্য করে। যেমন – পোস্টিং, ম্যানেজিং কন্টেন্ট, রাননিং অ্যাড, অ্যাপোইন্টমেন্ট শিডিউল এবং এনালাইজিং অটোমেটেড টুলের মাধ্যমে একটি কোম্পানি বা ব্র্যান্ড তাদের লক্ষ্যযুক্ত ক্রেতাদের নাগাল পেতে পারে।
ফেসবকু মার্কেটিংয়ের বেনিফিট বা সুবিধা গুলি কী কী?
উপরে উল্লেখিত কারণগুলি দেখে আশা করি বুঝতেই পেরেছেন যে ফেসবুক মার্কেটিং একটি ব্যবসাকে উচ্চতায় পৌঁছানোর জন্য কতটা অপরিহার্য মার্কেটিং স্ট্রেটেজিতে পরিণতি হয়েছে। এবার চলুন ফেসবুক মার্কেটিংয়ের পাঁচটি সুবিধা দেখে নেওয়া যাক।
১. কস্ট-ফ্রেন্ডলি ডিজিটাল মার্কেটিং :
ফেসবুক মার্কেটিংয়ের সব থেকে বড় সুবিধা হল, আপনি বিনামূল্যে নিজের কোম্পানির জন্য একটি ফেসবুক পেজ তৈরি করতে পারবেন এবং অতিশয় কম টাকা খরচ করে সেই পেজ ও তাতে পোস্ট করা যাবতীয় কন্টেন্টের পেইড প্রমোশন পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন।
এই পেইড প্রমোশন বা অ্যাড বিকল্পের অধীনে আপনি, ভার্চুয়ালি প্রোডাক্ট ও পরিষেবা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য প্রদর্শন করাতে এবং সম্ভাব্য ক্রেতাদের টার্গেট করতে পারবেন।
আবার, নিজের বাজেট সেট করার মাধ্যমে অ্যাডভার্টাইজমেন্ট রান করাতে এবং সেল ক্যাম্পেইন পরিচালনার মাধ্যমে তৈরি হওয়া অডিয়েন্স বেসের থেকে উপার্জন করতে ও সক্ষম হবেন।
২. ব্র্যান্ড লয়ালিটি:
ফেসবুক মার্কেটিংয়ে মেসেঞ্জার চ্যাট বক্স এবং কাস্টমার সাপোর্ট সিস্টেমের সাহায্যে সহজেই আপনি আগ্রহী ক্রেতাদের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারবেন।
আর চ্যাট বক্সে আসা যেকোনো প্রকারের কাস্টমার কোয়েরি বা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আপনি একজন সম্ভাব্য অডিয়েন্সের মনে ভাল প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে তাকে স্থায়ী ক্রেতায় পরিণত করতে পারবেন।
এছাড়া, প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রির পরবর্তী ধাপে যোগাযোগ বজায় রাখার জন্য তার থেকে ফিডব্যাক চাইতে পারেন।
এইসকল কার্যক্লাপ করার দরুন ক্রেতাদের সাথে সংযুক্ত থাকতে পারবেন, কাস্টমার এনগেজমেন্ট বৃদ্ধি করতে পারেন, সর্বোপরি ব্র্যান্ড লয়ালিটি তৈরি করতে সক্ষম হবেন।
৩. ফেসবকু ইনসাইটস এবং কোম্পানি সম্পর্কিত তথ্য:
অর্গানাইজড মার্কেটিং বা পেইড ফেসবুক অ্যাডভার্টাইজমেন্টের মধ্যে যেটিকেই বেছে নিন না কেন, ফেসবুক ইনসাইটস বিকল্পের মাধ্যমে আপনার পোস্টের জন্য – মোট অডিয়েন্স রিচ, পিপল এনগেজমেন্ট এবং কম্পারেটিভ রেজাল্টের মত একাধিক সহায়ক তথ্য গুলি আপনি দেখতে পারবেন।
আবার ফেসবুক অ্যাড অপশনের সাহায্যে, আপনি নিজের দ্বারা করা একটি পোস্টের – পারফরম্যান্স, মেট্রিক্স, ইমপ্রেশন এবং ফ্রিকোয়েন্সি ট্র্যাক করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে ফেসবুক থেকে প্রদত্ত এই সকল তথ্যগুলি কে, গুগল অ্যানালিটিক্স টুলের – অডিয়েন্স ভিজিট, নতুন দর্শকের শতাংশ, অবস্থান ইত্যাদি সম্পর্কে ডেটার সাথে মিলিয়ে নিজের টার্গেটেড ক্রেতার সংখ্যা বাড়াতে পারেন।
আরেকটু বিশদে বললে, ধরুন ফেসবুক এবং গুগল থেকে প্রাপ্ত ডেটা মিলিয়ে আপনি নিজের এলাকায় আপনার ব্যবসার কীরূপ প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে পারে তার উপর নির্ভর করে পরবর্তী মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি পরিকল্পনা করতে পারেন।
৪. সম্ভাব্য গ্রাহকদের টার্গেট করা:
ফেসবুক মার্কেটিংয়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সুবিধাগুলির মধ্যে একটি হল, এখানে ব্যবসায়িক সংস্থাগুলিকে ডেমোগ্রাফিক ডেটা এবং ইন্টারেস্টের (বয়স, লিঙ্গ, লোকেশন ইত্যাদি) উপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য ক্রেতাদের টার্গেট করার অনুমতি দেওয়া হয়।
তবে নতুন ক্রেতার খুঁজে বের করার পাশাপাশি, পূর্বে পেজ পরিদর্শন করেছিল এমন অডিয়েন্সকে রি-টার্গেট করতে এবং অতীতের টার্গেটেড ক্রেতাদের চিহ্নিত করতেও সাহায্য করে।
এর জন্য বিভিন্ন কনটেন্ট, প্রতিযোগিতামূলক কুইজ এবং মার্কেটিং ক্যাম্পেইন তৈরি করতে হবে। যাতে ট্রাফিক বাড়ানো এবং সম্ভাব্য ক্রেতাদের পুনরায় যোগাযোগ করার জন্য উত্সাহিত করা যায়।
৫. ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বৃদ্ধি:
ফেসবুকে বিনামূল্যে পেজ তৈরি করা যায়, তা তো আগেই বলে দিয়েছিলাম। কিন্তু শুধুমাত্র পেজ তৈরি করলেই তো আর হবে না, সাথে সেটিকে কিভাবে কাজে লাগিয়ে অডিয়েন্স তৈরি করতে হয় তাও আপনাকে জানতে হবে।
এক্ষেত্রে আপনি পেজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া লিঙ্কগুলি এম্বেড করতে পারেন।
এমনটা করার দরুন, পেজ পরিদর্শনকারী অডিয়েন্স সহজেই দিয়ে দেওয়া লিঙ্কে ক্লিক করে আপনার ওয়েবসাইটে রি-ডাইরেক্ট হয়ে যাবে। পাশাপাশি ওয়েবসাইটে ঢোকার দরুন নোটিফিকেশন ও আপডেট পাঠানোর জন্য অনুমতি চাওয়া হবে পরিদর্শনকারী অডিয়েন্সের থেকে।
এছাড়াও ফেসবুকের মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরো আপডেট পেতে পেজটিকে লাইক বা ফলো করার প্রস্তাবও দেওয়া হবে। ফলস্বরূপ, আপনার ব্র্যান্ডের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের ট্রাফিক সামগ্রিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
ফেসবকু মার্কেটিংয়ের অধীনে কী কী ফরম্যাট বিদ্যমান আছে? (What formats exist under Facebook Marketing?)
ফেসবুকে মার্কেটিংয়ের একটি অংশ হিসাবে, এই মেটা মালিকানাধীন প্ল্যাটফর্মের বিভিন্ন ধরনের অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ফর্ম্যাট গুলি তৈরি করা হয়েছে।
এই সকল ফর্ম্যাট গুলি কোম্পানি তথা প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রেতাদের বর্তমান সময়ের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তাগুলি পূরণ করবে এবং একই সাথে প্রোফাইল অপ্টিমাইজেশনেও সাহায্য করবে।
এক্ষেত্রে ফেসবুক মার্কেটিং ফরম্যাট মূলত ৬ প্রকারের হয়:
- ইমেজ অ্যাড (Image Ads),
- ভিডিও অ্যাড (Video Ads),
- ক্যারোজেল অ্যাড (Carousel Ads),
- কালেকশন অ্যাড (Collection Ads),
- স্লাইডশো অ্যাড (Slideshow Ads),
- লিড জেনারেশন অ্যাড (Lead generation Ads).
উল্লেখিত প্রত্যেকটি ফরম্যাটের বিশদ তথ্য নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. ইমেজ অ্যাড:
ফেসবুক মার্কেটিংয়ের অধীনে আসা এই এড ফর্ম্যাটে, ওয়েবসাইটে অডিয়েন্স ট্রাফিক বৃদ্ধি করার জন্য স্ট্যাটিক বিজ্ঞাপন দেওয়াটা সর্বাধিক আদর্শ বলে বিবেচিত হয়। এক্ষেত্রে এই ফর্ম্যাটের অধীনে পোস্ট করা ছবিকে JPG অথবা PNG ফরম্যাটে হতে হয় এবং টাইটেল ৪০ অক্ষরের বেশি যেন না হয়, আর সাথে যদি ‘কল টু অ্যাকশন’ (CTA) বাটন যুক্ত করে দেওয়া হয়, তবে ক্রেতাদের সাথে সংযুক্ত থাকা আরো সহজ হয়ে দাঁড়ায়।
২. ভিডিও অ্যাড:
ভিডিও অ্যাডের অধীনে – একটি কোম্পানি তাদের প্রোডাক্ট বা পরিষেবার বার্তা প্রদর্শন করতে পারে। এমনটা করার মাধ্যমে অধিক সংখ্যক আগ্রহী ক্রেতারা আপনার পেজে ভিজিট করবে এবং আপনি নিজের ব্র্যান্ডকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যেতে পারবেন।
এক্ষেত্রে এই ফর্ম্যাটের অধীনে পোস্ট করা ভিডিওগুলি আকারে বিভিন্ন হতে পারে, যেমন – শর্ট ভিডিও, লং-ফর্ম ভিডিও, ইন-স্ট্রিম ভিডিও, বা টিভিতে দেখানো শো এপিসোডের মতো দীর্ঘ ভিডিও।
৩. ক্যারোসেল অ্যাড:
ক্যারোসেল অ্যাড ফর্ম্যাটের মাধ্যমে, একটি অ্যাডভার্টাইজমেন্টে একসাথে ১০টি ছবি বা ভিডিও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
এমনটা করার দরুন, একসাথে এতগুলি ছবি বা ভিডিও দেখার কারণে কোম্পানির সৃজনশীলতা এবং ইন্টারঅ্যাক্টিভিটি সম্পর্কে অধিক ধারণা পাবেন অডিয়েন্সরা।
ক্যারোসেল অ্যাডের অধীনে – আপনি একটি বা একাধিক পণ্যের প্রচার করতে পারবেন এবং পাশাপাশি কোম্পানির সম্পর্কে একটি স্টোরি বা মার্কেটিং ক্যাম্পেইন তথ্যও শেয়ার করতে পারবেন।
৪. কালেকশন অ্যাড:
ফেসবুক মার্কেটিং প্ল্যাটফর্মের এই এড ফর্ম্যাটে, নিউজ ফিডে একটি ছোট ক্যাটালগ আকারে আপনার কোম্পানির বিভিন্ন প্রোডাক্টের একাধিক ছবি প্রদর্শন করা হয়।
এক্ষেত্রে এটি একটি ভার্চুয়াল ক্যাটালগের মতো, যেখানে একটিমাত্র ভিডিও বা ছবি থাকবে এবং তারপর সেই ছবি বা ভিডিওকেই একটি গ্রিড আকারে চারটি ছোট ছবিতে রূপান্তরিত করা হবে।
৫. স্লাইডশো অ্যাড:
স্লাইডশো অ্যাডে স্বল্প স্পিডে একটি ভিডিও-লাইক ফর্ম্যাট প্রদর্শন করা হয়, যাতে সম্ভাব্য ক্রেতারা প্রোডাক্ট এবং ব্র্যান্ড সম্পর্কে বুঝতে সক্ষম হন। এই ধরণের বিজ্ঞাপন, একাধিক স্টক ইমেজকে ভিডিও এডিটিং সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে সংযুক্ত করে ভিডিও ফর্ম্যাটে তৈরি করা যেতে পারে।
৬. লিড জেনারেশন অ্যাড:
লিড জেনারেশন অ্যাড নামক মার্কেটিং কৌশলের অধীনে বিজ্ঞাপনগুলিকে এমন ভাবে তৈরি করা হয়, যাতে প্রচারকারী কোম্পানির সাইটে ঢুকতে অডিয়েন্সরা বাধ্য হয়ে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তির নিউজ ফিডেরূপ একটি বিজ্ঞাপন দেখে তাতে ট্যাপ করা মাত্রই একটি উইন্ডো ওপেন হবে এবং তাতে সাবস্ক্রিপশন ফর্ম বা সাইনআপ ফর্ম পপআউট হবে।
এমনটা হওয়ার কারণ, যাতে সেই ব্যক্তি সরাসরি আপনার কোম্পানির নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করতে পারে।
আমাদের শেষ কথা,
বর্তমান সময়ে, নিজের ব্যবসা, ব্র্যান্ড বা পণ্য গুলি মার্কেটিং ও প্রচার করার সব থেকে লাভ জনক মাধ্যম হলো “ডিজিটাল মার্কেটিং”. এবং, ফেসবুকের মাধ্যমে করা এই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর প্রক্রিয়াটি কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং এর এক অনেক জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ ভাগ।
তাই, আশা করছি “ফেসবুক মার্কেটিং কি” এবং কেন ব্যবহার করা হয় তাছাড়া এর লাভ গুলি কি কি, সবটাই আপনারা বুঝতে পেরেছেন। তবে, এই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন বা সমস্যা থাকলে, আমাকে কমেন্টের মাধ্যমে জিগেশ করতে পারবেন।
Thanks a lot vai
ধন্যবাদ ভাইয়া
ধন্যবাদ।
বাহ চমৎকার, তুলনা নেই
ধন্যবাদ।
অনেক বেশি উপকৃত হলাম। সব কিছু সুন্দর সাবলীল ভাষাই লিখেছেন, যার থেকে সুস্পষ্ট ধারনা পেয়েছি ।অনেক বেশি ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ।
emon kono youtube chenel ace jeta theke khob sohoje fb marketing ta sikha jabe. j tay khob sondor babe A-Z sob tole dora hoice.thakle doya kore amar email a send korben link ta plz
অবশই আছে, ইউটিউবে একবার সার্চ দিয়ে দেখুন।
ডিজটাল মার্কেটিং এর উপর অনেকগুলো ব্যাসিক এবং এডভান্স টপিক কাভার করেছেন, ধন্যবাদ, আরো বেশি বেশি এমন পোস্ট চাই।
অবশই ভাই, ধন্যবাদ।
সুন্দর লিখেছেন
ধন্যবাদ।
ব্যাক লিংক ওয়েব সাইডের কোথায় পাবো? এবং কিভাবে সেট করবো