১০টি সেরা উপায়ে স্টুডেন্টসরা করতে পারবেন সেভিংস

স্টুডেন্ট লাইফে টাকা জমানোটা বেশ চ্যালেঞ্জিং একটা ব্যাপার। কারণ, প্রথমেই বাড়ি থেকে আমরা একটা লিমিটেড পরিমাণ টাকার বাইরে পকেট-মানি পাই না। আবার, বাড়ি থেকে সবসময়ে টাকা চাইলেও তা পাওয়া যায় না।

অন্যদিকে, বিশেষ করে স্কুল বা কলেজ লাইফে বাড়ি থেকে দূরে পড়াশোনা করতে গেলে, এমার্জেন্সি কারণে টাকা জমিয়ে রাখাটা খুবই জরুরি হয়ে পড়ে। সেই কারণে, একজন ছাত্র হিসেবে আপনাকে অবশই টাকা জমানোর উপায় এবং কৌশল সম্পর্কে মিনিমামটা জানতেই হয়।

তবে, ছাত্রদের টাকা জমানোর উপায় গুলি জানার আগে সবার প্রথমে আমাদের বুঝতে হবে যে, স্টুডেন্টসদের খরচা কিসে কিসে হয়?

মূলত, একজন ছাত্রের প্রধান খরচের জায়গাগুলো হল,

✔ টিউশন ফী,
✔ যাতায়াত ভাড়া,
✔ বিনোদন বাবদ খরচ,
✔ খাওয়া-দাওয়ার খরচা,
✔ অ্যাডমিশন/রেজিস্ট্রেশন ফী,
✔ বাড়ি/মেস/পিজি/হোস্টেল ভাড়া,
✔ মেডিক্যাল বা অন্যান্য এমার্জেন্সি খরচ,
✔ ইউনিফর্ম/বইখাতা/প্রাকটিক্যাল/সেশন খরচ ও ইত্যাদি।

এখন এতগুলো খাতের খরচ সামলিয়ে টাকা জমানোর বিষয়টা স্টুডেন্টদের কাছে সত্যিই অনেকটা কঠিন।

অবশই পড়ুন:

তবে, কঠিন হলেও এর মধ্যে থেকেই টাকা জমানোর কিন্তু বেশ কতগুলো উপায়ও রয়েছে, যেগুলো ঠিকমতো ফলো করলে উল্টোপাল্টা কারণে করা খরচের নেশাটা চলে যাবে। চলুন, তাহলে আমরা দেখে নিই স্টুডেন্টসরা কিভাবে খরচ কমাতে পারবে?

১০টি উপায়ে স্টুডেন্টসরা করতে পারবেন সেভিংস: টাকা জমানোর উপায়

ছাত্রদের টাকা জমানোর উপায়
How students can save money?

ছাত্রদের টাকা জমানোর উপায় বলতে মূলত আমাদের নিজের খরচের উপর বিশেষ ভাবে নজর দিতে হয়। এছাড়া, কোন কোন অপ্রয়োজনীয় ও অদরকারি খরচ গুলি বাদ দিলেও কাজ চলবে সেটা অবশই বুঝতে হবে।

রিলেটেড: স্টুডেন্টদের জন্য পার্ট টাইম জবের সেরা বিকল্প

ছাত্ররা কিভাবে টাকা জমাবেন বা সেভ করবেন এই বিষয়ে নিচে আমি কিছু সেরা পরামর্শ এবং উপায় আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। আশা করছি, উপায় গুলিকে কাজে লাগিয়ে আপনারা অবশই নিজের অতিরিক্ত খরচ কমিয়ে কিছু টাকা জমাতে পারবেন।

১. খাবার নিজে বানানো:

রেস্টুরেন্ট বা ডাইন-আউটের তুলনায় ঘরে রান্না করে খাওয়ার খরচা অনেকটাই কম। কোনো স্পেশ্যাল দিন ছাড়া বাইরে খাওয়ার অভ্যাস একদম কমিয়ে ফেলুন।

সময় না থাকলে বিভিন্ন বাজেট-ফ্রেন্ডলি কম্বো অর্ডার করে খেতে পারেন। অন্যদিকে, ঘরে বানানো খাবার সস্তার পাশাপাশি শরীরের পক্ষেও ভালো হয়। তাই, সময় পেলেই নিজের খাবার নিজে বানিয়ে খান।

একজন স্টুডেন্ট তার কাছে থাকা অতিরিক্ত বা এক্সট্রা টাকার ৭০-৮০% বাইরের ফাস্ট ফুড খেয়ে নষ্ট করা দেখা গেছে।

২. ফ্রি এন্টারটেইনমেন্টের ব্যবস্থা করা:

ফিল্ম, পার্টি, ক্লাব বা দামী জায়গায় ঘুরে টাকা খরচ করার বদলে বিভিন্ন ফ্রি এন্টারটেইনমেন্টের ব্যবস্থা করুন। যেমন- কোনো ফ্রি পার্কে যান, ফ্রি ওয়েবসাইট থেকে ফিল্ম দেখুন, কম্যুনিটি প্রোগ্রামে যান ও অন্যান্য।

এছাড়াও, স্টুডেন্ট ডিসকাউন্ট দেয় এমন জায়গা গুলির খবর করুন এবং এই ধরণের জায়গাতেই বেশিরভাগ সময় ঘুরুন ও সময় কাটান। যেমন- মিউজিয়ামে অনেক সময়েই স্টুডেন্টদের ফ্রিতে ঘুরতে দেয়।

৩. আনসাবস্ক্রাইব করা:

কোনরকমের অদরকারি পেইড মেম্বারশিপ বা সাবস্ক্রিপশন থাকলে সেগুলোকে সবার আগে আনসাবস্ক্রাইব করুন। বিশেষ করে, যেসব প্ল্যাটফর্মে অটো-রিনিউ সাবস্ক্রিপশনের ব্যবস্থা রয়েছে, সেগুলো থেকে বেরিয়ে আসুন।

এর বদলে আপনি কোনো সস্তার নিউসপেপার, কেবিল সার্ভিস বা ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে সাবস্ক্রাইব করতে পারেন।

এছাড়াও, নিজের মোবাইল রিচার্জ প্যাকে কস্ট-কাটিং করুন। কারণ, টেকনোলজির যুগে ইন্টারনেট ডেটার সাহায্যেও অনেক কম খরচে কল ও টেক্সট করা যায়।

৪. স্টুডেন্ট ডিসকাউন্ট ব্যবহার করা:

বিভিন্ন কালচারাল ইনস্টিটিউট, দোকান বা রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যারা স্টুডেন্ট ID-তে কেনাকাটা করলে বিভিন্ন ছাড় দিয়ে থাকে। এছাড়াও, যেসব মার্কেটে ছাড়ে জিনিসপত্র পাওয়া যায় সেখান থেকে বেশি করে কেনাকাটি করুন।

এমনকি, অনেক ট্রেন রুটেও স্টুডেন্টদের জন্যে মান্থলি টিকিটে ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়।

বিভিন্ন ডিসকাউন্ট কুপন জমিয়ে সেগুলো রেডিম করলেও অনেকটা টাকা সেভ হয়। অবশ্যই স্কুল বা কলেজের লাইব্রেরিতে ফ্রিতে স্টাডি মেটেরিয়াল, বই কিংবা অনলাইন থেকে পিডিএফ ডাউনলোড করে পড়াশোনাও করতে পারেন।

এতে, মাসের বাজেটে অনেকটা টাকাই বাঁচে।

অবশই পড়ুন: মোবাইল দিয়ে ইনকাম করার ৮টি সাইট

৫. মান্থলি বাজেট করা:

ছাত্ররা টাকা জমাতে চাইলে, সবচে আগেই তাদেরকে একটি মান্থলি বাজেট তৈরি করতে হবে। প্রতি মাসের বাজেট তৈরী করে সেই মোতে খরচ করতে পারলে আপনার টাকা ম্যানেজ করতে অনেকটা সুবিধা হবে।

প্রতি মাসে খরচের খাতগুলো ভাগ করে নিলে, আপনি ভালোভাবে বুঝতে পারবেন, কোন জায়গাগুলোতে খরচ করা দরকার আর কোথায় দরকার নয়।

এছাড়া, আপনি নিজের খরচগুলোর মধ্যে অবশ্যই পড়াশোনার খরচ, বইখাতা বা ক্লাসের খরচ এবং থাকা-খাওয়ার খরচগুলোও অ্যাড করতে ভুলবেন না।
এগুলো আপনাকে খরচ কমাতে অনেকটাই সাহায্য করবে।

৬. রুম শেয়ার করা:

ছাত্রজীবনে টাকা সেভ করার জন্য একা-এক বাড়ি ভাড়া করে থাকার চেয়ে, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে রুম শেয়ার করে থাকাটা লাভজনক। এতে আপনার টাকার খরচও যেমন কমবে, তেমনই খাবার, বিদ্যুৎ বিল বা অন্যান্য খরচাও আপনি তাদের সাথে ভাগ করে নিতে পারবেন।

তাছাড়াও, বন্ধুদের সাথে থাকার একটা আলাদা মজাও আছে আর অনেক অন্যান্য সুবিধাও রয়েছে।

৭. শুধুমাত্র প্রয়োজনে শপিং করা:

একজন মানুষ বিনা কারণে সবথেকে বেশি সময় ও টাকা নষ্ট করে শপিংয়ের পিছনে। আর, স্টুডেন্ট হিসেবে টাকা বাঁচানোর জন্যে এই শপিং করার অভ্যাসতটাকেই পুরোপুরি পাল্টাতে হবে। তাই এখন থেকে প্রয়োজন ছাড়া শপিং করতে যাবেন না।

খুব বেশি অসুবিধা না হলে সেকেন্ড-হ্যান্ড জিনিসপত্র কেনার চেষ্টা করুন। তা নাহলে এমন জায়গা থেকে শপিং করুন, যেখানে আপনি ছাড়ে শপিং করতে পারবেন। একজন স্টুডেন্ট হিসেবে যদি টাকা জমানোর কথা ভাবছেন, তাহলে শপিং করতে গেলে, দায়িত্বের সাথে কেনাকাটা করুন।

৮. সেকেন্ড-হ্যান্ড জিনিসপত্র কেনা:

স্টুডেন্ট থাকাকালীন নতুন জিনিসপত্র (যেমন- চেয়ার-টেবিল, বই, জামাকাপড়, রান্নার জিনিসপত্র, গ্যাস-ওভেন ও অন্যান্য) কেনার চেয়ে সেকেন্ড-হ্যান্ড জিনিস কেনা অনেকটাই বুদ্ধিমানের কাজ। নতুন জিনিসের তুলনায় সেকেন্ডহ্যান্ড জিনিসের দাম অনেকটাই কম।

এক্ষেত্রে আপনি অনেক টাকা সেভ করতে পারবেন এবং সেই টাকা আলাদা ভাবে জমাতে পারলেন। এছাড়া, সেকেন্ড-হ্যান্ড জিনিসের দাম কম হলেও প্রায় নতুন অবস্থাতেই জিনিসগুলো পাওয়া যায়।

আপনি লোকাল মার্কেট এমনকি বিভিন্ন অনলাইন শপিং সাইট থেকেও এই আইটেমগুলো কিনতে পারবেন।

৯. স্কলারশিপ/ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা:

নিজের একাডেমিক স্কোর ভালো হলে, অবশ্যই স্কলারশিপের জন্যে অ্যাপ্লাই করুন। স্কলারশিপ আপনার টিউশন ফীস কমাতে অনেকটাই সাহায্য করে।

এছাড়াও, আপনি ইউনিভার্সিটি বা ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন ইন্টারশিপ প্রোগ্রামেও পার্টিসিপেট করতে পারেন। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে (যেমন- Intershala), যেগুলোতে আপনি আপনার পছন্দমতো পেইড ইন্টার্নশীপ প্রোগ্রামে অংশ নিতে পারেন।

এছাড়াও, মাসিক টিউশন ফী দিতে না চাইলে, বিভিন্ন ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মে সাইনআপ করে লেকচার অনুযায়ী পেমেন্ট করেও পড়াশোনা করতে পারেন।

১০. পার্ট-টাইম জব খোঁজা:

স্টুডেন্ট লাইফে টাকা জমানোর জন্য একটা পার্ট-টাইম ইনকাম থাকলে খুবই ভালো হয়। একটি পার্ট-টাইম জব এর দ্বারা একজন ছাত্র অনেক সহজেই প্রচুর এক্সট্রা টাকা ইনকাম করতে ও সেগুলি জমাতে পারবেন।

এক্ষেত্রে, নিজের কলেজ টাইম, পড়াশোনার টাইম বাঁচিয়ে সময় থাকলে বিভিন্ন পার্ট-টাইম কাজ দেখতে পারেন। আপনি টিউশন দিয়ে, লোকাল দোকানে কাজ করে বা অন্যান্য অনলাইন কাজ করেও ইনকাম করতে পারেন।

এতে, পকেট-মানির জন্যে আপনাকে অন্য কারোর উপর নির্ভর না করতে হয়।

১১. এক্সট্রা টিপস: অনলাইন কনটেন্ট তৈরি:

যদি আপনি একজন স্টুডেন্ট এবং আপনি টাকা জমানোর উপায় গুলি খুঁজছেন, তাহলে অবশই অনলাইনে কনটেন্ট পাবলিশ করেও প্রতিমাসে এক্সট্রা টাকা ইনকাম করতে ও জমাতে পারবেন।

এক্ষেত্রে আপনি Blogging, YouTube channel, Affiliate marketing, ইত্যাদির মতো কাজ গুলি করতে পারবেন। এছাড়াও একজন ছাত্র হিসেবে ইন্টারনেট থেকে নানান কাজ গুলি করে প্রতিদিন ৪০০ ৫০০ টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

আপনি দিনে ২-৩ ঘন্টা কাজ করলেই হবে। নিজের খালি সময়ে যেকোনো জায়গা থেকে অনলাইন কাজ গুলি করা যাবে।

 

অবশই পড়ুন:

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error:
Scroll to Top