স্মার্টফোনের ব্যাটারী ব্যাকআপ কিভাবে বাড়াবেন – (বুস্ট করুন ব্যাটারী)

আপনার এন্ড্রয়েড মোবাইলের ব্যাটারী লাইফ একেবারেই কম হয়ে এসেছে ? অনেক তাড়াতাড়ি মোবাইলের ব্যাটারী শেষ হয়ে যাচ্ছে ? তাহলে কিভাবে স্মার্টফোনের ব্যাটারি ব্যাকআপ বৃদ্ধি করা যাবে ? আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাদের এন্ড্রয়েড মোবাইলের ব্যাটারি বুস্ট করার এমন কিছু সাধারণ কৌশল গুলোর বিষয়ে বলবো যেগুলো ভালো করে অনুসরণ করলে লো ব্যাটারির সমস্যা নিজের স্মার্টফোনে আর পাবেননা।

How to increase android mobile battery backup ?

আমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই কিন্তু বার বার মোবাইলটি চার্জ দিতে একেবারেই পছন্দ করে থাকিনা। তাই, একটি স্মার্টফোন কেনার সময় আমাদের যেই বিষয়টি নিয়ে সব থেকে অধিক কৌতুহল থাকে সেটা হলো, ‘মোবাইলের ব্যাটারী কতক্ষন ব্যাকআপ দিবে’। বর্তমান সময়ে প্রায় বেশিরভাগ স্মার্টফোনেই ব্যাটারির সাথে জড়িত বিভিন্ন সুবিধা গুলো দেওয়া হচ্ছে। যেমন, ফাস্ট চার্জিং এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি লাইফ ইত্যাদি।

মোবাইলটি কেনার সময় যদিও তার ব্যাটারীর ক্ষমতা অধিক থেকে থাকে, তবে ব্যবহার করার কিছু দিন পর অনেক সময় অনেক স্মার্টফোনে অনেক তাড়াতাড়ি ব্যাটারী কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। মনে রাখবেন, মোবাইলের ব্যাটারি লাইফ বিভিন্ন বিষয় গুলোর ওপরে নির্ভর করে। যেমন, স্ক্রিন ব্রাইটনেস, উন্নত প্রসেসর, ব্যাকগ্রউন্ডে চলা সফটওয়্যার, GPS এবং দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগ ইত্যাদি।

কিভাবে বৃদ্ধি করবেন এন্ড্রয়েড মোবাইলের ব্যাটারী লাইফ ?

কি কি কারণে আপনার মোবাইলের চার্জ অনেক তাড়াতাড়ি কমে যাচ্ছে বা মোবাইলে চার্জ থাকে না কেন, সেটা নিয়ে কথা বলে বিশেষ লাভ নেই। তাই চলুন, নিচে আমরা সরাসরি জেনেনেই একটি android smartphone-এর ব্যাটারি বুস্ট করার কিছু দারুন ও কার্যকর উপায় গুলো।

১. কালো ওয়ালপেপার ব্যবহার করুন

জেকেও তাদের মোবাইলে ওয়ালপেপার অবশই ব্যবহার করে থাকেন। এক্ষেত্রে, যদি আপনি মোবাইলের চার্জ সেভ করতে চাইছেন তাহলে যতটা সম্ভব কালো রঙের ওয়ালপেপার রাখার চেষ্টা করুন। আজকাল প্রায় বেশিরভাগ স্মার্টফোনেই AMOLED screens ব্যবহার করা হয়। আর এই ধরণের স্ক্রিনে যতটা কালো বা ডার্ক রঙের ব্যবহার করবেন ততটাই ব্যাটারী সেভ হবে।

কারণ, ডিসপ্লের ক্ষেত্রে black pixels গুলোর white pixels-এর তুলনায় অনেক কম পাওয়ার এর প্রয়োজন হয়। যখন আপনি কালো ওয়ালপেপার ব্যবহার করবেন, তখন যেই পিক্সেল গুলো বন্ধ রাখা হয়েছে সেগুলো তুলনামূলক ভাবে অনেক কম পাওয়ার ব্যবহার করে থাকে। তবে, সাদা ওয়ালপেপার ব্যবহার করলে পিক্সেল গুলো কালোর তুলনায় অধিক পাওয়ার ব্যবহার করবে।

২. দ্রুত ব্যাটারি নিষ্কাশন কেন হচ্ছে ?

যখন কথা হচ্ছে অনেক তাড়াতাড়ি মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার, তখন যদি এর কারণটা জানতে পারতেন, তাহলে সমাধান পাওয়াটা কতটা সহজ হতো তাই না ? চিন্তা নেই, যেকোনো android smartphone-এর মধ্যেই আপনারা battery-র সাথে জড়িত একটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ option পাবেন।

আর সেটা হলো, “battery usage” অপসন। এই অপসন ব্যবহার করে আপনি অনেক সহজেই জেনেনিতে পারবেন যে, কোন অ্যাপ এর কারণে আপনার মোবাইলের ব্যাটারি অনেক তাড়াতাড়ি কমছে। মানে, স্মার্টফোনের ব্যাটারী কোন অ্যাপ কতটুকু ব্যবহার করছে সেটা জানা যাবে। 

নিজের android mobile থেকে, settings >> battery >> battery usage by apps-এ চলে যেতে হবে। এবার, আপনার মোবাইলের ব্যাটারী কোন অ্যাপ কত শতাংশ ব্যবহার করেছে সেটা আপনি দেখতে পারবেন। আপনি যদি এমন কোনো অ্যাপ খুঁজে পান যেটা আপনি একেবারেই ব্যবহার করেননা তবে সে মোবাইলের অনেক চার্জ খেয়ে দিচ্ছে, তাহলে সেটাকে সাথে সাথে uninstall করুন। 

৩. স্বয়ংক্রিয় উজ্জ্বলতা বন্ধ করুন

 বেসিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অধিক লোকেরা তাদের মোবাইল স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা, “automatic brightness” অপশনের সাথে সেট করে রাখেন। অবশই, এটা অনেক দারুন একটি ফীচার যেখানে মোবাইলের উজ্জ্বলতা নিজে নিজেই নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে। তবে, এই ফীচার এর মাধ্যমে সেট হওয়া স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা প্রয়োজনের থেকেও অধিক থাকা দেখা যায়। মানে, আপনার এতটা ব্রাইটনেস এর প্রয়োজন সাধারণত থাকেনা।

তাই, আমি পরামর্শ দিবো আপনি মোবাইলের ব্রাইটনেস এর পরিমান নিজের হিসেবে ম্যানুয়ালি সেট করুন। স্ক্রিন ব্রাইটনেস যতটা সম্ভব সব সময় কমিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন। প্রয়োজনে বাড়িয়ে নিতে পারেন, তবে ভালো এবং স্পষ্ট ভাবে স্ক্রিনটি দেখার জন্যে যতটা দরকার ততটাই ব্রাইটনেস রাখার পরামর্শ আমি দিবো।

কারণ, একটি স্মার্টফোনে থাকা বড় ডিসপ্লের স্ক্রিন অধিক ব্যাটারি পাওয়ার ব্যবহার করে থাকে। আর তাই, screen brightness কমানোর মাধ্যমে আপনি মোবাইলের অনেক টুকু ব্যাটারী সেভ করে রাখতে পারবেন।  

৪. অপ্রয়োজনীয় পরিষেবা গুলো বন্ধ রাখুন

বেশিরভাগ সময় আমরা আমাদের মোবাইলে থাকা কিছু পরিষেবা গুলোকে চালু রেখে সেগুলোকে বন্ধ করতে ভুলে যাই। যেমন, Wi-Fi, GPS, NFC, Bluetooth ইত্যাদি। এই পরিষেবা গুলো চালু রেখে ভুলে যাওয়ার স্বভাবের জন্যে কিন্তু আপনার মোবাইলের ব্যাটারি লাইফ এর ওপর খারাপ প্রভাব পড়ছে।

আপনি কি জানেন, যখন আপনি Bluetooth বা Wi-Fi এর মতো option গুলো চালু (on) রাখেন তখন সেগুলো ক্রমাগত ভাবে আসে পাশে থাকা Bluetooth devices বা Wi-Fi connection খুঁজতে থাকে।

অন্যান্য কোনো device উপলব্ধ না থাকলেও এরা ক্রমাগত সার্চ করেই যাবে যার কারণে মোবাইলের ব্যাটারীও ব্যবহার হবে ও চার্জ কমতে থাকবে। তাই আমি পরামর্শ দিবো, যখন GPS, WiFi বা Bluetooth ব্যবহার করছেননা তখন মনে করে এই অপসন গুলো বন্ধ করে রাখবেন।

৫. Greenify app ব্যবহার করুন

Google Play Store-এর মধ্যে মোবাইলের ব্যাটারি খরচ কমানোর বা বাঁচানোর জন্যে আপনারা প্রচুর third-party apps গুলো পেয়ে যাবেন। অন্যান্য অ্যাপ গুলো তাদের কাজে কতটা ভালো সেটা আমি বলতে পারছিনা, তবে Greenify অবশই এক্ষেত্রে একটি অনেক বিশ্বস্ত অ্যাপ। Greenify-এর মধ্যে আপনারা এরকম অনেক features গুলো পাবেন যেগুলির দ্বারা অনেক ভাবেই ব্যাটারির খরচ কমানো যাবে।

এর দ্বারা আপনারা মোবাইলের অ্যাপস গুলোকে আপনি একটি বিশেষ মোডে রাখতে পারবেন যেখানে অ্যাপস গুলো ব্যাকগ্রউন্ডে চলতে পারেনা। আপনার মোবাইলে কোন অ্যাপ গুলো সর্বাধিক ব্যাটারী পাওয়ার ব্যবহার করছে সেগুলো খুঁজে বের করে এবং সেগুলোকে hibernation mode-এ রেখে দেওয়া হয়। এছাড়া, আরো অনেক ধরণের options / features আপনারা পাবেন যেগুলো ব্যবহার করে স্মার্টফোনের ব্যাটারী ব্যাকআপ বাড়ানো যাবে।

৬. Screen Times Out সেট করুন

আপনার মোবাইলের স্ক্রিন যত অধিক সময় পর্যন্ত অন থাকবে ততটাই অধিক ব্যাটারিরও খরচ হবে। যখন আপনি মোবাইল ব্যবহার করছেননা, তখন মোবাইলের স্ক্রিন অন থাকলে সেটা অকারণেই ব্যাটারির খরচ ছাড়া আর কিছু না।

তবে, এর জন্যে আপনাকে যতটা সম্ভব ততটাই কম সময়ের সাথে স্ক্রিন টাইম আউট সেট করতে হবে। একবার ভেবে দেখুন তো দেখি, যদি আপনার screen time out-এর সময় ১ মিনিট সেট করা থাকে, তাহলে তুলনামূলক ভাবে কতটা অধিক ব্যাটারী খরচ হচ্ছে যদি এটাকে ১৫ সেকেন্ড হিসেবে সেট রাখা হতো।

তাই, আমার পরামর্শ এটাই থাকবে, মোবাইলের চার্জ অধিক সময় পর্যন্ত ধরে রাখতে হলে screen time out-টিকে ১৫ সেকেন্ড হিসেব সেট করুন। এর জন্যে আপনাকে, ‘settings >> display & brightness >> auto screen off‘ অপশনে যেতে হবে।

৭. ভাইব্রেট বন্ধ করুন

অবশই, যদি আপনি ভেবে থাকে যে আপনার মোবাইলে ভাইব্রেশন এর দরকার আছে তাহলে অবশই এটার ব্যবহার করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, যখনি আপনার মোবাইলে কোনো ইনকামিং ফোন কল চলে আসে, তখন তার সাথে হওয়া ভাইব্রেশন এর কারণে ব্যাটারীর অধিক খরচ হয়ে থাকে।

আপনি চাইলে ভাইব্রেশন বন্ধ করে কেবল রিংটোন সেট করে রাখতে পারেন। এতে, তুলনামূলকভাবে অনেক কম চার্জ এর প্রয়োজন। তাই, যদি প্রয়োজন না হয় তাহলে মোবাইলের ভাইব্রেশন বন্ধ রাখাটাই ভালো হবে।

৮. আসল ব্যাটারি ব্যবহার করুন

যদি আপনি আপনার স্মার্টফোনে আসল ব্যাটারির ব্যবহার করছেননা, তাহলে আজ নাহয় কাল ব্যাটারী নিয়ে সমস্যা হবেই হবে। আপনার মোবাইলের ব্যাটারী ব্যাকআপ যদি ভালো রাখতে হয়, তাহলে এই পয়েন্টটি কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মোবাইলে শুধুমাত্র আসল ব্যাটারি ব্যবহার করবেন যেটা সরাসরি অফিসিয়াল মোবাইল কোম্পানির দ্বারা বাজারে উপলব্ধ রয়েছে। কিছু টাকা বাঁচাতে গিয়ে সম্পূর্ণ স্মার্টফোনটি নষ্ট করাটা সঠিক সিদ্ধান্ত মোটেও না।

৯. পাওয়ার সেভার মোড ব্যবহার করুন

যেকোনো android smartphone-এর মধ্যেই power saver mode অবশই থাকে। আপনি এই পাওয়ার সেভার মোড অন করার মাধ্যমে মোবাইলের ব্যাটারী অনেকটুকু সেভ করতে পারবেন। এই মোড অন করলেই আপনার স্মার্টফোনে সক্রিয় কিছু functions, activities এবং visual effects-গুলোকে সীমিত করে দেওয়া হয়। তবে, এই মোড যেকোনো সময় ব্যবহার করার পরামর্শ আমি দিচ্ছিনা।

যখন আপনার মোবাইলের ব্যাটারী অনেক কমে আসবে এবং এখনই আপনি মোবাইল চার্জ দিতে পারবেননা, এই ধরণের পরিস্থিতিতে এই battery savings mode / power saving mode ব্যবহার করতে পারবেন।

পাওয়ার সেভিং মোড অন করার জন্যে সরাসরি চলে যেতে হবে,

  • Settings >> battery >> power saving mode.
  • এবার, power saving mode-এর অপশনে ক্লিক করুন এবং অপশনটি On করুন।

উপসংহার,,

তাহলে বন্ধুরা, যদি আপনার স্মার্টফোনের ব্যাটারী ব্যাকআপ অনেক তাড়াতাড়ি খরচ হচ্ছে এবং মোবাইলের ব্যাটারী ব্যাকআপ কিভাবে বাড়াবেন এই বিষয়ে ভাবছেন, তাহলে ওপরে বলে দেওয়া উপায় এবং টিপস গুলো অনুসরণ করে দেখুন। দেখবেন, আপনার এই সমস্যার সমাধান অনেক সহজেই হয়ে যাবে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, যদি আপনার মোবাইলের ব্যাটারী খারাপ না হয়ে থাকে, তাহলে তাড়াতাড়ি মোবাইলের চার্জ শেষ হওয়ার সমস্যার কারণ মূলত কোনো অ্যাপ হওয়া দেখা গেছে। এক্ষেত্রে, ওপরে বলা ২ ন. পয়েন্টটি অনুসরণ করুন এবং দেখুন আপনার মোবাইলে কোন অ্যাপ সর্বাধিক ব্যাটারী পাওয়ার ব্যবহার করছে।

আশা করছি, আমাদের আজকের আর্টিকলে আপনাদের ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অবশই সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন। আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে নিচে কমেন্ট করে জানাবেন।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error:
Scroll to Top