সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার আগে ৭ টি জরুরি বিষয়ে যাচাই করুন

আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাদের সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল ফোন কেনার আগে কোন কোন বিষয়ে যাচাই করতে হয়, সেই প্রত্যেকটি জরুরি বিষয়ে বলবো। (Second Hand Mobile Buying Guide in Bengali).

Old used second hand mobile buying guide in Bengali.

এরকম অনেক সময় হয়ে থাকে যে একটি নতুন মোবাইল কেনার জন্য আমাদের কাছে টাকা থাকেনা।

আর, মোবাইলের প্রতি থাকা আমাদের আকর্ষণ টিকে সম্পূর্ণ করার জন্য, আমরা একটি সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।

এমনিতে, পুরোনো মোবাইল কিনার ক্ষেত্রে সমস্যা কিছুই নেই। 

তবে, যদি আপনি একটি সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন কেনার আগে কিছু জরুরি বিষয়ে নজর না দিয়ে থাকেন,

তাহলে অবশই, হতে পারে আপনি অধিক টাকা দিয়ে একটি খারাপ পুরাতন মোবাইল কিনে নিতে চলেছেন।

এছাড়া, সব থেকে জরুরি বিষয় যেটা সেটা হলো, ভালো করে যাচাই না করে পুরোনো মোবাইল কিনলে,

অনেক ক্ষেত্রেই আপনি বিপদে পড়ার সম্ভাবনা অবশই রয়েছে।

তাই, যদি আপনিও একটি পুরাতন মোবাইল কেনার কথা ভাবছেন,

তাহলে, সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার আগে কোন বিষয়ে যাচাই করতে হবে সেটা নিয়ে আমার পরামর্শ গুলো জেনে রাখুন। 

সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার আগে কোন ৭ টি বিষয়ে যাচাই করতে হবে ?

নিচে আমি সেই প্রত্যেকটি জরুরি পয়েন্ট (point) গুলোর বিষয়ে বলে দিচ্ছি যেগুলো একটি পুরনো মোবাইল কেনার সময় অবশই দেখতে হবে। 

এই মোবাইল কেনার পরামর্শ বা গাইড (guide) গুলো আপনাদের অনেক ভালো করে জেনে রাখাটা জরুরি।

কারণ বর্তমানে অনেকেই রয়েছেন যারা আপনাকে পুরোনো মোবাইল বিক্রির এর নাম ঠকাতে (cheat) চেষ্টা করবেন।

তাহলে চলুন, পুরোনো মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে কি কি দেখতে হবে বা সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল যাচাই কিভাবে করবেন সেটা জেনেনেই।

১. চুরির মোবাইল নাকি সেটা দেখুন 

অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে পুরোনো মোবাইল বিক্রি করার নামে চুরির মোবাইল বিক্রি করা হয়।

এবং যদি সত্যি আপনাকে একটি চুরির মোবাইল বিক্রি করা হচ্ছে,

তাহলে অবশই আপনি বিপদে পড়ার সম্ভাবনা প্রচুর।

সেকেন্ড হ্যান্ড পুরোনো মোবাইল কেনার ক্ষেত্রে আমরা সেই মোবাইলের ক্যাশ মেমো (cash memo) দেখার প্রয়োজন মনে করিনা।

আর এখানেই আমরা সব থেকে বড় ভুল করে থাকি।

ক্যাশ মেমো না দেখার ফলে, আমাদের কেনা পুরোনো মোবাইলটি চুরির নাকি সেই মোবাইল বিক্রি করতে আশা ব্যক্তির, সেটার কোনো প্রমান থাকছেনা।

যার ফলে, ভবিষ্যতে যদি সেই মোবাইল চুরির হয়ে থাকে, তাহলে পুলিশ (police) আপনাকে সেই মোবাইলের চোর হিসেবে ভেবে নিবেন।

তাই, সাধারণ একটি মোবাইলের জন্য আপনি সাংঘাতিক বড় বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন।

  • যেকোনো সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার সময় সেই মোবাইলের অরিজিনাল বিল (bill) এর hard copy বা soft copy দেখবেন এবং নিজের কাছে রাখবেন।
  • মোবাইলের IMEI number এর ওপরে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • যেই IMEI number মোবাইলের original cash memo (bill) এর মধ্যে লিখা রয়েছে, সেই IMEI নম্বর মোবাইলের মধ্যে থাকতে হবে।
  • আপনি, *#06# টাইপ করে যেকোনো মোবাইলের IMEI নাম্বর চেক করতে পারবেন। তারপর, মোবাইলের IMEI নম্বর এর সাথে cash memo তে থাকা IMEI নম্বর এর সাথে মিলিয়ে দেখুন।
  • মনে রাখবেন, মোবাইলটির IMEI number এবং মোবাইল কেনার সময় দেওয়া cash memo (bill) এর মধ্যে লিখা থাকা IMEI number এক থাকতে হবে।
  • দুটো ক্ষেত্রে যদি IMEI নম্বর আলাদা আলাদা থাকছে, তাহলে মোবাইলটি চুরির মোবাইল হওয়ার সম্ভাবনা ৯০% থাকছে।
  • এক্ষেত্রে, সেই পুরোনো মোবাইল ফোন ভুলেও কিনবেননা।

২. নকল (fake) মোবাইল নাকি সেটা দেখুন 

বর্তমান সময়ে পুরাতন মোবাইল বিক্রির ব্যবসা প্রচুর পরিমানে করা হচ্ছে।

এবং, এমন কিছু ব্যক্তি বা সংগঠন রয়েছে জারানাকি নকল মোবাইল বিক্রি করার কাজ করছেন।

যেকোনো original mobile এর মতো দেখতে একি ধরণের নকল মোবাইল বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে।

আবার অনেক সময়, মোবাইলের বাইরের cover / case কিন্তু আসল কোম্পানির লাগিয়ে, ভিতরে নকল / অন্য মোবাইলের অংশ লাগিয়ে রাখা হয়।

এক্ষেত্রে, সেই নকল মোবাইল গুলোকে খালি চোখে দেখে আসল বা নকলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারাটা খুব কঠিক কাজ।

বর্তমান সময়ে সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন কেনার ক্ষেত্রে, আমরা অনলাইন ইন্টারনেটের মাধ্যমে লোকেদের সাথে যোগাযোগ করে থাকি।

এক্ষেত্রে, এক দেখাতেই যদি আপনি আসল মোবাইল চিনে নিতে না পারছেন,

তাহলে, পরে বুঝতে পারলেও মোবাইল বিক্রি করা ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়াটা সম্ভব হবেনা।

তাই, পুরাতন মোবাইল কেনার সময় কিছু বিষয়ে ধ্যান রাখতে হবে।

  • মোবাইলের settings ইত্যাদিতে দিয়ে মোবাইলের original model name দেখুন।
  • বিশেষ করে, মোবাইলের hardware configuration যেমন RAM, ROM, Processor ইত্যাদি check করুন।
  • ইন্টারনেটের সাহায্যে আপনি মোবাইলের মডেলটির hardware configuration গুলোকে মিলিয়ে দেখুন।
  • মোবাইলের settings menu তে গিয়ে about phone এর ট্যাবে ক্লিক করুন। এতে, আপনারা সেই মোবাইলের model number, model name, CPU, RAM ইত্যাদি প্রত্যেক মূল তথ্য গুলো জেনেনিতে পারবেন।
  • *#06# নিজের মোবাইল থেকে dial করুন এবং এতে আপনাকে আপনার মোবাইলের IMEI নম্বর দেখিয়ে দেওয়া হবে। যেকোনো একটি IMEI number copy করুন এবং “imei.info” ওয়েবসাইটে গিয়ে IMEI box এর মধ্যে নিজের copy করা IMEI number লিখে check করুন।
  • এতে, আপনি আপনার মোবাইলের অরিজিনাল model name এবং brand name জেনেনিতে পারবেন

৩. মোবাইলের ব্যাটারী নিয়ে যাচাই করুন 

অনেক সময় এরকম হয়ে থাকে যে, মোবাইলটি বাইরের থেকে দেখতে দারুন অবস্তায় রয়েছে বলে মনে হবে।

হে, আপনার একটি অরিজিনাল ব্র্যান্ড এর মোবাইল দেওয়া হবে।

কিন্তু সমস্যা থাকবে মোবাইলের ব্যাটারী নিয়ে যেটা নিয়ে আমরা অধিক নজর দিয়ে থাকিনা।

মোবাইলের ব্যাটারিতে সমস্যা থাকলে সেটা অনেক সময় সাথে সাথে বুঝতে পারবেননা।

তবে, প্রায় কিছু সময় ব্যবহার করার পর ব্যাটারির সমস্যা আপনার নজরে পরে থাকে।

তাই, পুরোনো মোবাইল কেনার সময় কিছু সময় নিয়ে সেই মোবাইল ব্যবহার করে দেখুন, গেম খেলুন, গান শুনুন বা ভিডিও দেখুন।

মুখের কোথায় বিশ্বাস না করে অবশই যাচাই করে দেখুন।

যদি ব্যাটারী নিয়ে মোবাইলে সমস্যা রয়েছে, তাহলে সেটা আপনার চোখে অবশই পড়বে।

৪. মোবাইলের পোর্ট গুলো কাজ করছে তো ? 

যদি আপনি একটি used mobile phone কেনার কথা ভাবছেন,

তাহলে মোবাইলটি কেনার সময় আপনাকে মোবাইলের বিভিন্ন ports এবং accessories গুলোর ওপরে নজর দিতে হবে।

মোবাইলের headphone / headphone port, charger / charging port ইত্যাদি কাজ করছে কি না সেটা দেখুন।

নতুন মোবাইলের ক্ষেত্রে সেগুলো অবশই ভালোই থাকবে। তবে, সমস্যা হলেও warrenty অবশই রয়েছে।

কিন্তু, পুরোনো ফোনে যদি এই ports বা accessories গুলো নিয়ে সমস্যা থাকে,

তাহলে আপনাকে আবার সেগুলোকে ভালো করার ক্ষেত্রে টাকা খরচ করতে হবে।

অনেক সময় used second hand mobiles এর ক্ষেত্রে SIM card tray এবং memory card tray এসব খারাপ থাকে।

তাই, মোবাইল কেনার আগে সেই সব বিষয়ে যাচাই অবশই করতে হবে।

৫. অধিক টাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই 

মনে রাখবেন, used mobiles এর ক্ষেত্রে আপনার থেকে অধিক বেশি টাকা আদায় করার চেষ্টা করা হবে।

তবে, আপনি যতটা সম্ভব কম টাকা দিয়ে সেই পুরোনো মোবাইল কেনার চেষ্টা করতে হবে।

আপনি একটি নতুন মোবাইল কিনতে পারছেননা বলেই পুরোনো ফোন কিনতে চলেছেন।

তাই, অধিক টাকা দিয়ে যদি old used phone কিনতে চলেছেন, তাহলে আপনার লাভ কি হলো।

মনে রাখবেন, যেই সময় একটি মোবাইলের মডেল বাজারে লঞ্চ (launch) হয়ে থাকে,

তখন সেই মোবাইলের মডেলের দাম অধিক বেশি থাকে।

কিন্তু, কিছু দিন বা মাস যাওয়ার পর সেই মডেলের দাম কমতে থাকে।

তাই সম্ভাবনা রয়েছে যে,

যেই ব্যক্তি আপনাকে মোবাইল বিক্রি করবেন সে আপনাকে মোবাইলের launch price এর ওপরে নির্ভর করে দাম বলবে।

সেক্ষেত্রে, আপনি মোবাইল এর বর্তমান মার্কেট প্রাইস (market price) ইন্টারনেটের মাধ্যমে যাচাই করে দেখুন।

এবং, বর্তমান নতুন কিনতে গেলে সেই মোবাইলের দাম কত, সেটার ওপরে নজর দিয়ে দাম নির্ধারিত করুন।

আমার পরামর্শ হলো,

মোবাইলটি নতুন কিনতে গেলে, বর্তমান মার্কেট প্রাইস যত হবে তার ৩৫% থেকে ৪৫% দিয়ে আপনি সেই পুরোনো মোবাইল কিনুন।

আপনি কত শতাংশ টাকা দিবেন সেটা নির্ভর করছে মোবাইলটি কতটা পুরোনো সেটার ওপরে।

৬. মোবাইলের মধ্যে ড্যামেজ রয়েছে নাকি ? 

মোবাইলটি চুরির মোবাইল না এবং মোবাইলের ব্যাটারী, পোর্ট ইত্যাদি যদি সব ঠিক রয়েছে,

তাহলে পরের ধাপে, আপনাদের দেখে নিতে হবে মোবাইলের ফিজিক্যাল কন্ডিশন (physical condition).

অনেক সময়, মোবাইল কেনার খুশিতে (excitement) আমরা সেই মোবাইলের physical parts / body ভালো করে দেখিনা।

ফলে, ঘরে গিয়ে নতুন নতুন বিষয় আমাদের চোখে পরে।

তাই, মোবাইল কেনার সময় প্রত্যেকটি parts এবং সম্পূর্ণ body ভালো করে দেখে নিতে হবে।

মনে রাখবেন, এটা একটি সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল ফোন আর যেই ব্যক্তি মোবাইলটি আগে ব্যবহার করেছে, তার হাত থেকে মোবাইলটি পড়তেও পারে বা কোনো রকমের স্ক্র্যাচ (scrach) সেখানে থাকতে পারে।

যদি মোবাইলের মধ্যে cover লাগানো আছে, তাহলে সেই কভার খুলুন এবং মোবাইলের আগে ও পিছে ভালো করে দেখুন।

৭. মোবাইলের সেলুলার নেটওয়ার্ক 

অনেক সময় মোবাইলের মধ্যে সব সঠিক থাকলেও cellular network connection নিয়ে সমস্যা পাওয়া যায়।

মোবাইলটি  বাইরের থেকে অবশই ভালো থাকবে,

তবে, ঘরে গিয়ে যখন আপনি SIM insert করবেন, তখন যদি সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক এর কাঠি চলে না আসে বা একেবারেই নেটওয়ার্ক না আসে,

তাহলে মনে করবেন মোবাইলের সেলুলার নেটওয়ার্ক হার্ডওয়্যার এর সাথে সমস্যা রয়েছে।

এবং অনেকেই এসব সমস্যা থাকার ফলে অনেক কম দামে মোবাইল বিক্রি করেন।

ফলে মোবাইলটি কেনার সময় ক্রেতা ভেবে থাকেন যে, আমি অনেক কমে মোবাইলটি পেয়ে যাচ্ছি, তাই এসব বিষয়ে যাচাই না করেই সেই মোবাইল কিনে ফেলেন।

তাই, মোবাইল কিনতে যাওয়ার সময় SIM card লাগিয়ে মোবাইল এর network connection অবশই চেক করবেন।

অন্যান্য জরুরি বিষয় গুলো দেখুন 

একটি ব্যবহার করা পুরাতন মোবাইল কেনার সময় মূলত আপনাকে কোন কোন বিষয়ে যাচাই করতে হবে সেই বিষয়ে ওপরে আমি আপনাদের বলেছি।

তবে, ওপরে বলা পয়েন্ট গুলো ছাড়াও আরো কিছু সাধারণ বিষয় রয়েছে যেগুলোর ওপরে আপনার নজর দিতে হবে।

  • যিহেতু মোবাইলটি পুরোনো তাই ডিসপ্লের (display) ওপরে ভালো করে নজর দিন।
  • ইন্টারনাল মেমরি (internal memory) কতটুকু খালি রয়েছে সেটা দেখুন।  যদি মোবাইলের ইন্টারনাল মেমরি একেবারেই ভর্তি (full) তাহলে অবশই মোবাইলে নতুন কিছু install করতে পারবেননা।
  • মোবাইলের ক্যামেরা গুলো চেক করে দেখুন। প্রত্যেকটি ক্যামেরা (front / selfie) ভালো করে কাজ করছে কি না এবং ক্যামেরা কোয়ালিটি ভালো কি না সেগুলো দেখুন।
  • ফোন চার্জ হতে কত সময় নিচ্ছে সেটাও কিন্তু অবশই দেখে নিবেন।

 

আমাদের শেষ কথা,,

তাহলে বন্ধুরা, আজকে আমরা জানলাম এমন কিছু পয়েন্ট গুলোর বিষয়ে যেগুলো একটি second hand mobile কেনার সময় দেখে নেওয়াটা অনেক জরুরি।

হাতে টাকা কম থাকলে, নতুন মোবাইলের তুলনায় একটি পুরনো মোবাইল কেনাটাই আমাদের জন্যে অনেক। 

কিন্তু, যদি সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন টি কেনার পর সেটা বিভিন্ন ক্ষেত্রে খারাপ বেড় হয়, তাহলে লাভ কি হলো।

তাই, চেনা বা অচেনা যার থেকেই মোবাইল কিনছেন, ওপরে দেওয়া জরুরি পরামর্শ গুলো মনে রেখেই পুরোনো মোবাইল কিনবেন।

আমাদের আজকের আর্টিকেল, “Tips To Buy a Second Hand Mobile Phone” যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে,

তাহলে আর্টিকেলটি অবশই শেয়ার করবেন।

আমাদের আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।

 

2 thoughts on “সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল কেনার আগে ৭ টি জরুরি বিষয়ে যাচাই করুন”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error:
Scroll to Top