কোথায় টাকা বিনিয়োগ করলে অনেক তাড়াতাড়ি টাকা বাড়ানো যাবে?

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা টাকা বিনিয়োগ বিষয়টি নিয়ে প্রচুর চিন্তিত থাকেন। যদি আপনিও ইতিমধ্যে টাকা জমানোর কথা ভাবছেন, তাহলে আপনার মাথায় হয়তো কিছু প্রশ্ন গুলি অবশই ঘুরছে। যেমন, টাকা কোথায় জমাবো? তাড়াতাড়ি টাকা বাড়ানোর জন্য কোথায় টাকা ইনভেস্ট করা যায়? কোথায় টাকা রাখলে লাভ বেশি? এবং এই ধরণের অন্যান্য কিছু প্রশ্ন।

তবে, আমরা আমাদের টাকা কোথায় বিনিয়োগ করব বা কোথায় বিনিয়োগ করলে ভালো হবে, সেটা নির্ভর করছে বিভিন্ন আলাদা আলাদা প্রয়োজনীয়তা গুলির উপর। যেমন ধরুন, আপনি কতটা টাকা বিনিয়োগ করবেন, কত সময়ের জন্য টাকা রাখছেন, কতটা রিস্ক নিতে আপনি রেডি, এই প্রত্যেকটি বিষয় গুলি ভালো করে বুঝে নিয়ে আপনাকে বিনিয়োগ করা দরকার।

তবে, নিচে আমি আপনাদের এমন সেরা কিছু টাকা জমানোর উপায় গুলি বলতে চলেছি, যেগুলি সত্যি আপনাকে ভালো মানের রিটার্ন আয় করতে সাহায্য করবে।

কোথায় টাকা বিনিয়োগ করলে অনেক তাড়াতাড়ি টাকা বাড়ানো যাবে?

কোথায় টাকা রাখলে লাভ বেশি
কোথায় টাকা বিনিয়োগ করব?

কোথায় টাকা রাখলে লাভ বেশি বা তাড়াতাড়ি লাভ বাড়ানোর জন্য কোথায় টাকা ইনভেস্ট করা যায়, এই প্রশ্ন গুলির উত্তর হলো, একটি সেরা ও লাভজনক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান এবং স্কিম। যা আমি উপরেই বলেছি, আপনি কত সময়ের জন্য ইনভেস্টমেন্ট করতে চাইছেন এবং কতটা টাকা ইনভেস্ট করছেন, পাশাপাশি কি ধরণের মার্কেটে টাকা বিনিয়োগ করছেন, এই বিষয় গুলি অবশই অধিক রিটার্ন লাভ করার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে থাকে।

১. মিউচুয়াল ফান্ড:

মিউচুয়াল ফান্ড হল বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর থেকে কালেক্ট করা টাকার সমষ্টি। এখানে ইকুইটি ফান্ড, ডেট ফান্ড, রিয়েল এস্টেট ইত্যাদি নানান উপায়ে মার্কেটে বিনিয়োগ করা যায়। মিউচুয়াল ফান্ডে ডিভিডেন্ড ও ক্যাপিটাল গেইনের মাধ্যমে ইনভেস্ট করতে পারবেন। 

মিউচুয়াল ফান্ড, বলতে গেলে শেয়ার মার্কেট এর মতোই এবং এখানেও কোম্পানির স্টক বা ইউনিট কিনতে হয়। এরপর, কোনো সময়ে সেই ইউনিটের দাম বাড়লে, সেই ইউনিট বিক্রি করে মুনাফা লাভ করতে পারবেন। 

অন্যদিকে, ডিভিডেন্ড হল কোনো কোম্পানির লাভের অংশ, যা তাদের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এখানে আপনার বিনিয়োগ অনুযায়ী লাভের অংশ পাবেন। 

অ্যানুয়াল রিটার্ন রেট: ১০% থেকে ৪০%-এরও বেশি।

২. শেয়ার মার্কেট: 

শেয়ার মার্কেট হল এমন একটা প্ল্যাটফর্ম, যেখানে একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে আপনি বিভিন্ন কোম্পানীর স্টক বা শেয়ার কিনতে-বেচতে পারবেন। এখানে আপনি সবথেকে তাড়াতাড়ি বিনিয়োগের উপর প্রচুর রিটার্নস আয় করতে পারবেন।

আপনি এখানে ইনভেস্টমেন্ট, ডেইলি বা অপশন ট্রেডিং-এর চয়েস পাবেন। এমনকি প্রতিদিন বিনিয়োগ ও স্টক বিক্রি করেও এখানে প্রতিদিন ইনকাম করা সম্ভব। শেয়ার মার্কেটে শর্ট, মিড বা লং-টার্মে ইনভেস্ট করার ব্যবস্থা আছে।   

শেয়ার মার্কেট থেকে সব থেকে তাড়াতাড়ি ও অনেক বেশি রিটার্ন লাভ করার সম্ভাবনা থাকলেও এখানে প্রচুর রিস্ক রয়েছে। টাকা লস হওয়ার সম্ভাবনা এখানে অনেক বেশি। তাই, এখানে ইনভেস্ট করার আগে এবিষয়ে ভালো করে জেনেনিবেন।

অ্যানুয়াল রিটার্ন রেট: ১০% বা তারও বেশি 

৩. ব্যাঙ্ক রেকারিং ডিপোজিট (RD):

রেকারিং ডিপোজিট হল এক ধরণের টার্ম-ডিপোজিট। এখানে আপনাকে নিজের ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রাখতে হয়। বদলে, ব্যাঙ্ক আপনাকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ইন্টারেস্ট হিসেবে রিটার্ন করে। 

এখানে ৬ মাস থেকে শুরু করে ১০ বছর পর্যন্ত RD-তে টাকা জমা করতে পারেন। আর, আপনি এখানে সেভিংস অ্যাকাউন্টের তুলনায় বেশি ইন্টারেস্ট রেট পাবেন।

অ্যানুয়াল রিটার্ন রেট: ৭-৮%

৪. গোল্ড:

গোল্ড বা সোনা থেকেও টাকা ইনকামের একাধিক উপায় রয়েছে। প্রথমেই, সোনার গয়না, কয়েন বা বার কিনে নিজের টাকাকে লিকুইড অ্যাসেট হিসেবে ইনভেস্ট করতে পারবেন। এরপরে, যেকোনো বিশ্বস্ত প্লাটফর্ম থেকে গোল্ড সেভিংস স্কিমে রেকারিং ডিপোজিটের মাধ্যমেও টাকা জমিয়ে সোনাতে ইনভেস্ট করা যায়। 

এই দুই ধরণের উপায়েই টাকা ইনভেস্ট করতে পারলে, যখনই সোনার দাম বাড়বে আপনি সেটাকে বিক্রি করলে ভালো রিটার্ন লাভ করতে পারবেন।

এছাড়াও, বিভিন্ন ডিজিটাল গোল্ড অ্যাপের মাধ্যমে মাত্র ১০০ টাকা থেকেও ডিজিটাল সোনা কিনে ইনভেস্ট করতে পারবেন এবং চাইলে আসল সোনাতেও কনভার্ট করতে পারেন। 
আবার, গভর্নমেন্টের গোল্ড বন্ডগুলোতে ইনভেস্ট করলেও সেখান থেকে টাকা ইনকাম করা যায়। এই ধরনের বন্ডে এক গ্রাম থেকে ৪ কেজি পর্যন্ত সোনা কেনা সম্ভব।

এমনকি, গোল্ড মিউচুয়াল ফান্ড বা গোল্ড এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড এর মাধমেও গোল্ডে ইনভেস্ট করে ইনকামের সুযোগ রয়েছে। এখানেও আপনারা শর্ট, মিড্ বা লং-টার্ম বিনিয়োগ করতে পারবেন। 

অ্যানুয়াল রিটার্ন রেট: ৭.৫-১২%

৫. ক্রিপ্টোকার্রেন্সি: 

ক্রিপ্টোকার্রেন্সি একধরণের ডিজিটাল কার্রেন্সি, যেখানে টাকাপয়সার বদলে বিভিন্ন ভার্চুয়াল কয়েনের মাধ্যমে পেমেন্ট চালানো হয়। এই ধরণের ভার্চুয়াল কয়েনেগুলো ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। 

বেশ কিছু জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকার্রেন্সি হল Bitcoin, Litecoin ও অন্যান্য। এখানে আপনি সরাসরি এই কয়েনগুলোতে টাকা ইনভেস্ট করতে পারেন। 

এছাড়াও, এই কয়েনগুলো কাউকে চড়া ইন্টারেস্ট রেটে ধারও দিতে পারেন। আর, ট্রেডিং, মাইনিং, স্টেকিং, ডিভিডেন্ড, বা অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামের মাধ্যমেও এই ক্রিপ্টো থেকে অনেক তাড়াতাড়ি অনেক বেশি টাকা ইনকাম করা যায়।    

অ্যানুয়াল রিটার্ন রেট: ১৫৫-৪৬০%

৬. পোস্ট অফিস স্কিম:

শুনতে পুরোনো আইডিয়া হলেও, পোস্ট অফিস কিন্তু এখনও ব্যাংকের তুলনায় বেশি ইন্টারেস্ট রেট দেয়। পোস্ট অফিসে ইনভেস্ট করার জন্যে বিভিন্ন ধরণের ডিপোজিট স্কিম আছে। এমনকি, এখানে অনেক রকমের ট্যাক্স-সেভিং স্কিমও রয়েছে, যেমন- PPF, NSC ও ইত্যাদি।  

এই স্কিমগুলো থেকে আপনি শট, মিড্ বা লং-টার্মে টাকা ফিক্সড করে মাসিক বা বার্ষিকভাবে ইন্টারেস্ট পেতে পারেন। তবে, এই সেভিং স্কিমগুলোর ইন্টারেস্ট রেট ৩ মাস অন্তর পাল্টানো হয়। এই ধরণের ইনভেস্টমেন্টগুলোতে মিনিমাম ১ বছরের মেয়াদে বিনিয়োগ করতে হয়।   

অ্যানুয়াল রিটার্ন রেট: ৪-৮.২%

৭. রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্টস (REITs): 

সাইড ইনকাম বাড়ানোর একটা সেরা উপায় হল এই REITs। এখানে আপনাকে কোনোরকমের কোনো প্রপার্টি কিনতে বা ম্যানেজ করতে হবে না। এই REITs-এর অধীনে সমস্ত কমার্শিয়াল রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো রয়েছে। এদের প্রপার্টিগুলোর মধ্যে পড়ে রিটেইল স্পেস, অফিস, হোটেল ও ইত্যাদি। 

এখানেও মিউচুয়াল ফান্ডের মতোই ইনভেস্ট করার সুযোগ রয়েছে। আর, এখানে আপনি যেমন হাই ডিভিডেন্ড পাবেন, তেমনই এদের রিটার্ন-অন-ইনভেস্টমেন্টও অনেকটাই বেশি। সরাসরি কোনো অনলাইন ব্রোকারের থেকে বা মিউচুয়াল ফান্ড থেকেও বিভিন্ন REITs স্টকে বিনিয়োগ করা যায়।     

অ্যানুয়াল রিটার্ন রেট: ১০-১১.৫%

৮. ডিভিডেন্ড স্টকস: 

শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্ট করলে অবশ্যই ডিভিডেন্ড স্টকসে ইনভেস্ট করুন। কারণ, এই ধরণের স্টকস থেকে আপনি মাসিক বা ৩ মাস পরপর আপনার ইনভেস্টমেন্টের পরিমাণ অনুযায়ী লভ্যাংশ পেয়ে যাবেন। এমনকি, ভালো-ভালো কোম্পানিগুলো তাদের ডিভিডেন্ড পেআউট বছর-বছর বাড়াতে থাকে। 

এছাড়াও, অনেক ইনভেস্টার তাদের ডিভিডেন্ডের মুনাফাগুলো সরাসরি তাদের স্টকেই রি-ইনভেস্ট করেন। যাতে, তারা স্টকসের উপর আরও বেশি প্রফিট করতে পারেন। এখানে তাড়াতাড়ি টাকা বাড়ানোর জন্যে অবশ্যই বিভিন্ন ধরণের একাধিক ডিভিডেন্ড স্টকসগুলোকে বিনিয়োগ করতে হবে।   

অ্যানুয়াল রিটার্ন রেট: ২-৫%

৯. বন্ড ও বন্ড ইন্ডেক্স ফান্ড: 

কোনো কোম্পানির মালিকানা স্টকের মাধ্যমে কেনার বদলে, সেই কোম্পানিকে একজন ইনভেস্টার হিসেবে টাকা ধারও দেওয়া যায়। শেয়ার মার্কেটের ভাষায় এই উপায়টাকে বন্ড ও বন্ড ইনডেক্স ফান্ড বলে। স্টক কেনার তুলনায় বন্ড ফান্ড অনেকটাই সুরক্ষিত। 

এখানে আপনার আর্থিক ঝুঁকি কম থাকে। তবে, স্টকের তুলনায় এখানে রিটার্ন-অন-ইনভেস্টমেন্টও কিছুটা কম হয়। এই ধরণের বিনিয়োগ করা আপনার শেয়ার মার্কেট পোর্টফোলিওর জন্যেও খুবই ভালো। 

অ্যানুয়াল রিটার্ন রেট: ১০-১২%

অবশই পড়ুন:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error:
Scroll to Top