একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে কিভাবে টাকা আয় করা যায়? এই বিষয়ে যদি ভালোভাবে জেনে ও বুঝে নিতে পারেন, তাহলে অবশই প্রতিমাসে কিছু অতিরিক্ত অর্থ প্যাসিভ ইনকাম হিসেবে আয় করে নিতে পারবেন আপনি।
তবে যখন কথা হচ্ছে এন্ড্রয়েড মোবাইল এপস তৈরি করে ইনকাম করার, তখন কিন্তু শুরুতে এই কাজ আপনার জন্য অনেকটা চ্যালেন্জিং লাগতে পারে। একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে টাকা আয় করার প্রক্রিয়ার থেকে বেশ অনেকটাই আলাদা এই কাজের ধরণ।
কিন্তু আবার, একবার Google Play Store-ই নিজের app-টি পাবলিশ করার পর যদি আপনার অ্যাপটি লোকেরা পছন্দ করেন এবং হাজার হাজার লোকেদের দ্বারা আপনার অ্যাপটি ডাউনলোড করা হয়, সেক্ষেত্রে নিজের মোবাইল অ্যাপ থেকে কতটা টাকা আয় করা যাবে, সেটা আপনি কল্পনাও করতে পারবেননা।
ভেবে দেখুন, আপনার তৈরি করা অ্যাপ যদি কমেও ২০ হাজার জন লোকেরা তাদের মোবাইলে ব্যবহার করছেন এবং প্রত্যেক ইউসার (user) থেকে আপনি প্রত্যেকদিন কমেও ১০ টাকা ইনকাম করছেন, তাহলে মাসে আপনার মোট ইনকাম হবে ২,০০,০০০/- টাকা।
এটা কেবল একটি উদাহরণ ছিল যার মাধ্যমে আমি আপনাদের বুঝাতে চেষ্টা করেছি যে, যত বেশি লোকেরা আপনার তৈরি করা এপস ব্যবহার করবেন, ততটাই অধিক আপনার ইনকামের সুযোগও বাড়বে।
তবে আপনিও একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে কিভাবে টাকা আয় করতে পারবেন সেই বিষয়ে সম্পূর্ণ বিস্তারিত তথ্যগুলো জানার জন্য আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ুন। এখানে, অ্যাপ তৈরি করে ইনকাম করার নিয়ম এবং প্রতিটি উপায় গুলোর বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
সূচিপত্র:
এপস তৈরি করে ইনকাম করার সম্পূর্ণ ধাপ গুলো:
বর্তমান সময়ে অনেকেই একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে সেখান থেকে প্যাসিভ ইনকাম করার বিষয়টা অনেক ভালো ভাবে জেনে ও শিখে নিতে চাইছেন। আপনি চাইলে আপনিও অনেক সহজে একটি অ্যাপ তৈরি করে সেখান থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
তবে, এই কাজ থেকে ইনকাম করার জন্য আপাকে শুরুতেই জরুরি প্রত্যেকটি ধাপের (steps) বিষয়ে ভালোভাবে বুঝতে হবে।
১. একটি বিষয় বা সমস্যা চিহ্নিত করুন:
আপনি কি ধরণের অ্যাপ তৈরি করবেন? কি ধরণের অ্যাপ এর চাহিদা রয়েছে? বা কোন বিষয় নিয়ে অ্যাপ বানালে ভালো হবে? একটি অ্যাপ বানানোর আগে আপনাকে এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে হবে।
আপনার অ্যাপ এর দ্বারা লোকেরা তাদের কোন সমস্যা গুলোর সমাধান পেতে পারবেন সেটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে। আপনার কিছু নির্দিষ্ট টার্গেটেড অডিয়েন্সদের টার্গেট করেই নিজের অ্যাপটি তৈরি করার কথা ভাবতে হবে।
নিজের অ্যাপ থেকে ইনকাম করার জন্য সবথেকে আগেই আপনাকে নিজের একটি এন্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনারা ইন্টারনেটে উপলব্ধ নানান অ্যাপ মেকার ওয়েবসাইট/সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করতে পারবেন।
২. আপনার অ্যাপটি ডাউনলোড হবে?
কোন বিষয় বা সমস্যার সমাধান করতে অ্যাপ তৈরি করবেন, যদি এর উত্তর আপনি পেয়ে গিয়েছেন, তাহলে এবার আপনাকে অনলাইনে খানিকটা রিসার্চ শুরু করতে হবে। Google Play Store বা অন্যান্য Mobile App Store গুলোতে গিয়ে দেখুন, আপনার বেঁছে নেওয়া অ্যাপ টপিকের সাথে রিলেটেড অন্যান্য কি কি অ্যাপস মার্কেটে রয়েছে।
আপনি যেই ধরণের অ্যাপসটি তৈরি করতে চাইছেন, মার্কেটে আগের থেকে উপলব্ধ সেই একই ধরণের অ্যাপস গুলো লোকেদের দ্বারা কতটা পছন্দ-অপছন্দ করা হচ্ছে, অ্যাপগুলো কি পরিমানে ডাউনলোড ও ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা বুঝুন। এতে, আপনার সিলেক্ট করা অ্যাপ এর চাহিদা এবং প্রতিযোগিতা মার্কেটে কতটা আছে সেটা আপনি আরামে বুঝতে পারবেন।
৩. অ্যাপ এর সঠিক পরিকল্পনা করুন:
আপনার অ্যাপ এর মধ্যে কি ধরণের ফীচার, অপসন, সুবিধা বা ইউজার-ইন্টারফেসে থাকবে সেই বিষয়ে অ্যাপ তৈরি করার আগেই আপনাকে ভালোভাবে প্ল্যান করতে হবে। এতে, অ্যাপ ডেভেলপ করার সময় আলাদা ভাবে বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা।
শুরুতে অ্যাপটি যতটা সম্ভব সিম্পল এবং হালকা রাখার চেষ্টা করতে হবে। এবং, ধীরে ধীরে নতুন নতুন আপডেট এর দ্বারা অ্যাপ এর মধ্যে নতুন নতুন ফীচার, অপসন বা ফাঙ্কশন গুলো যুক্ত করতে পারবেন।
৪. দেরি না করে আপনার অ্যাপটি ডেভেলপ করুন:
প্রত্যেকটি বিষয়ে ভালো ভাবে প্ল্যান এবং যাচাই করার পর এবার আপনাকে তৈরি করতে হবে নিজের মোবাইল অ্যাপটি। এমনিতে একটি এন্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরি করার ক্ষেত্রে আপনার কাছে প্রচুর অপসন গুলো রয়েছে।
আপনি চাইলে নিজেই নানান Android app development tools (Android Studio এবং Kotlin/Java) গুলো ব্যবহার করে নিজের পছন্দমতো একটি অ্যাপ ডেভেলপ করে নিতে পারবেন।
এবার, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট টুলস গুলোর বিষয়ে আপনার যদি কোনো ধরণের জ্ঞান নেই, সেক্ষেত্রে একজন দক্ষ অ্যাপ ডেভেলপারকে হায়ার করেও নিজের পছন্দমতো অ্যাপ তৈরি করিয়ে নিতে পারবেন।
এছাড়া, ইন্টারনেটে এমন নানান ওয়েবসাইট বা অ্যাপ বিল্ডার গুলো পাবেন যেগুলো আপনাকে কোনো ধরণের কোডিং ছাড়া অ্যাপ তৈরি করার সুবিধা দিয়ে থাকে।
৫. অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে সাবমিট করুন:
আপনার অ্যাপটি সম্পূর্ণভাবে তৈরি করা হয়ে গেলে শুরুতে সেটিকে নিজেই কিছুদিন ব্যবহার করে দেখুন। এতে, অ্যাপ এর মধ্যে কোনো ধরণের সমস্যা থাকলে সেটা বুঝতে ও সেটিকে ঠিক করে নিতে পারবেন।
সব ঠিক থাকলে, এবার আপনাকে নিজের অ্যাপটিকে Google Play Store-এর মধ্যে জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে একটি Google Play Console account তৈরি করতে হবে। মনে রাখবেন, একাউন্ট তৈরি করার সময় আপনার থেকে $25 USD (ওয়ান টাইম পেমেন্ট) রেজিস্ট্রেশন ফী হিসেবে নেওয়া হবে।
গুগল প্লে কনসোলে একাউন্ট তৈরি করার পর এবার আপনি সরাসরি নিজের App-এর APK files-টি আপলোড করতে হবে। মনে রাখবেন, অ্যাপ এর সাথে জড়িত নানান ইমেজ, স্ক্রিনশট, গ্রাফিক্স, ডেসক্রিপশন, টাইটেল, ইত্যাদিও আপনাকে যুক্ত করতে হয়। সবটা হয়ে যাওয়ার পর, এবার আপনাকে সরাসরি অ্যাপটিকে জমা দিতে হবে।
মনে রাখবেন, অ্যাপ জমা দেওয়ার পর সেটি গুগল এর টীম দ্বারা রিভিউ করা হবে। এবার, যদি আপনার অ্যাপটি গুগল দ্বারা এপ্রুভ করে দেওয়া হয়, তাহলে আপনার অ্যাপটি Google Play-তে চলে আসবে এবং জেকেও আপনার অ্যাপ প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে ও সেটিকে ব্যবহার করতে পারবেন।
৬. অ্যাপ থেকে ইনকাম করার কৌশল গুলো:
একটি অ্যাপ তৈরি করা থেকে নিয়ে গুগল প্লে স্টোরে জমা দেওয়া পর্যন্ত সব কাজ করার পর এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নিজের অ্যাপ থেকে কিভাবে টাকা ইনকাম করা যাবে? তাই তো?
তবে এটা আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে উপলব্ধ একাধিক অ্যাপ মনেটাইজেশন কৌশল গুলোর মধ্যে থেকে আপনি কোন কৌশল গুলোকে কাজে লাগাবেন।
একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে সেখান থেকে অর্থ উপার্জন করার মূল উপায় গুলো নিচে বলে দেওয়া হলো,
- App Download: অ্যাপ ডাউনলোড করার জন্য ওয়ান-টাইম চার্জ নেওয়া।
- In-App Purchases: আপনার অ্যাপের মধ্যে উপলব্ধ নানান প্রিমিয়াম ফীচার বা ভার্চুয়াল কনটেন্ট গুলো ডাউনলোড ও ব্যবহার করার জন্য টাকা নিতে পারবেন।
- Freemium Model: বেসিক অ্যাপটি ফ্রীতে ডাউনলোড করতে দিলেও অ্যাপ এর মধ্যে থাকা প্রিমিয়াম ফীচার গুলো ব্যবহার করার জন্য টাকা নিতে পারবেন।
- Subscriptions: আপনার অ্যাপ বা অ্যাপে থাকা কনটেন্ট গুলো এক্সেস করার জন্য প্রতিমাসে রেকারিং ফী (সাবস্ক্রিপশন চার্জ) নিয়ে ইনকাম করতে পারবেন।
- Ads (বিজ্ঞাপন): নিজের অ্যাপ এর মধ্যে Ads যুক্ত করে অ্যাপ ইউজারদের বিজ্ঞাপন দেখিয়ে click এবং impressions এর বিপরীতে নিয়মিত টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
নিজের জন্য একটি এন্ড্রয়েড অ্যাপ কিভাবে তৈরি করবেন?
বর্তমানে, একটি এন্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরি করাটা কোনো বড় ব্যাপার না এবং অনেক সহজেই আপনারা নিজের একটি অ্যাপ বানিয়ে নিতে পারবেন। মনে রাখবেন, এপস বানিয়ে ইনকাম করার জন্য সবচে আগে আপনাকে নিজের একটি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে নিতে হবে।
Google এর মধ্যে সার্চ করলে আপনারা প্রচুর আলাদা আলাদা free app builder platforms / websites গুলো পাবেন যেখান থেকে ফ্রীতে অ্যাপ বানিয়ে নিতে পারবেন।
এছাড়া, আপনি যদি সম্পূর্ণ planning এর সাথে একটি professional android app বানাতে চাইছেন, তাহলে একজন ভালো app developer এর সাথে যোগাযোগ করে তাকে কিছু টাকা দিয়ে একটি প্রফেশনাল অ্যাপ তৈরি করিয়ে নিতে পারবেন।
শেষে, আপনি যদি নিজেই একটি এন্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরি করতে চাইছেন, তাহলে YouTube এর মধ্যে প্রচুর tutorial পাবেন যেগুলো দেখে অ্যাপ বানানো শিখতে পারবেন।
নিচে আমি আপনাদের এমন কিছু সেরা android application builder sites এর নাম বলে দিচ্ছি যেগুলোর মাধ্যমে কোনো ধরণের কোডিং (coding) ছাড়াই অ্যাপ বানিয়ে নিতে পারবেন।
- Appy Pie: No Code App Development Platform
- Mobiroller: Android & iOS App Maker
- Appsgeyser.com – No code App Maker
- Thunkable – Build Custom Mobile Apps
- AppSheet – Build apps with no code
- Mobincube – The Best App Builder
ওপরে দেওয়া ওয়েবসাইট গুলো ব্যবহার করে apps কিভাবে বানাতে হয় সেটা আপনারা YouTube এর মধ্যে video tutorial দেখেও জেনেনিতে পারবেন।
অ্যাপ তৈরি করে কি কি মাধ্যমে ইনকাম করা যায়? ৭ টি উপায়
উপরে বলে দেওয়া মতো, সবটা করে নেওয়ার পর এখন আমাদের শেষ কাজটি হলো, তৈরি করা এন্ড্রয়েড অ্যাপ দিয়ে টাকা ইনকাম করা। এক্ষেত্রে, আপনি নিজের বানানো app থেকে টাকা ইনকাম করার জন্য বিভিন্ন উপায় গুলো ব্যবহার করতে পারবেন।
১. In-app Advertisement:
যদি আপনার অ্যাপটি প্রচুর লোকেরা ডাউনলোড করে নিজেদের মোবাইলে ব্যবহার করছেন, তাহলে বিজ্ঞাপন (advertisements) এর মাধ্যমে যেকোনো অ্যাপ থেকে টাকা ইনকাম করাটা সব থেকে সোজা এবং লাভজনক উপায় হয়ে দাঁড়ায়।
বর্তমান সময়ে, বেশিরভাগ লোকেরাই নিজেদের অ্যাপস গুলোতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে প্রত্যেক দিন প্রায় হাজার হাজার টাকা ইনকাম করে নিচ্ছেন। এক্ষেত্রে নানান ধরণের বিজ্ঞাপন একটি mobile app-এর মধ্যে দেখানো যেতে পারে, যেমন, Interstitial ads, Banner ads, Video ads, Native ads, Text ads, Native ads, ইত্যাদি।
Apps গুলোতে বিজ্ঞাপন দেখানো ক্ষেত্রে মূলত Google Admob ব্যবহার করা হয়। যদিও, এক্ষেত্রে অন্যান্য কিছু advertisement company গুলোরও ব্যবহার নানান developers-রা করেন।
যখন আপনি নিজের apps গুলোতে বিজ্ঞাপন লাগাবেন, তখন অ্যাপ ব্যবহারকারীরা সময়ে সময়ে অ্যাপ এর মধ্যে কিছু এডস দেখতে পাবেন। আর, যখনি সেই এডস গুলোকে ইউসাররা দেখবেন বা ক্লিক করবেন তখন আপনি টাকা ইনকাম করতে পারবেন। অনেক সময় এডস এর ওপরে click না করলেও কেবল ad impression এর জন্যেও আপনারা টাকা পাবেন।
বিজ্ঞাপন দেখিয়ে অনেক সহজে এবং কম সময়ে নিজের অ্যাপ থেকে অধিক টাকা ইনকাম করা সম্ভব। এমনিতে, Admob এর বাইরেও আপনারা অন্যান্য কিছু third-party ad networks গুলোর ব্যবহার করতে পারবেন।
যেমন,
- Facebook audience network
- AppLovin
- Vungle
- AdColony
- Appnext
২. In-App Purchases:
এই revenue model-টি ব্যবহার করে প্রচুর app developers-রা নিজের app থেকে প্রচুর টাকা ইনকাম করে থাকেন।
আপনারা হয়তো নানান ধরণের apps গুলো ব্যবহার করার সময় দেখেছেন, আপনাকে কিছু টাকা দিয়ে app এর মধ্যে থাকা কিছু extra features বা subscription কিনে নিতে বলা হয়।
প্রচুর ফ্রি android games গুলোতেও দেখবেন, guns, character, extra power, virtual currency ইত্যাদি টাকা দিয়ে কিনে নেওয়ার সুবিধা দেওয়া হয়। আর এই ধরণের premium features গুলোকে কিনে নিয়ে app টিকে upgrade করাকেই in-app purchase বলা হয়।
সরাসরি বললে in-app purchase হলো সেই সেবা (service), যেখানে একটি app থেকে কিছু টাকার বিনিময়ে কিছু extra features, subscriptions বা upgrades গুলোকে কিনে নেওয়া যেতে পারে।
তাই, আপনিও আপনার app এর মধ্যে কিছু advanced features গুলো যোগ করে কিছু premium upgrade options রাখতে পারবেন। এতে, অ্যাপ ব্যবহারকারীরা যখনি সেই extra features গুলো কিছু টাকা দিয়ে কিনবেন, তখন আপনি টাকা পাবেন।
এরকম প্রচুর জনপ্রিয় android apps গুলো রয়েছে যারা in-app purchases এর মাধ্যমে সাংঘাতিক পরিমানে টাকা ইনকাম করছেন।
৩. Subscription:
এরকম অনেক android apps আপনারা হয়তো দেখেছেন যেগুলোতে আমাদের প্রথমে কিছু কনটেন্ট (content) ফ্রীতে দেখতে বা ব্যবহার করতে দেওয়া হয়, তবে, যখন সেই অ্যাপটির কনটেন্ট এর মধ্যে আমাদের রুচি চলে আসে, তখন কিছু টাকা দিয়ে সম্পূর্ণভাবে অ্যাপ কনটেন্ট গুলো এক্সেস করার জন্য সাবস্ক্রাইব (subscribe) করতে বলা হয়।
মূলত video streaming apps, tutorial apps, online course, learning ইত্যাদি এই ধরণের এপস গুলোতে এই ধরণের subscription revenue model ব্যবহার করা হয়।
তাই, আপনিও চাইলে নিজের app এর মধ্যে থাকা কিছুটা কনটেন্ট (content) ফ্রীতে কোনো টাকা বা চার্জ (charge) ছাড়া অ্যাপ ইউসারদের এক্সেস (access) করতে দিতে পারেন।
এবং, ফ্রি কনটেন্ট এক্সেস করতে দিয়ে আপনি তারপর সম্পূর্ণ অ্যাপ কনটেন্ট এক্সেস করার ক্ষেত্রে ইউসার দের কিছু টাকা দিয়ে subscribe করতে বলতে পারবেন।
যদি ইউসাররা আপনার ফ্রি কনটেন্ট থেকে ভ্যালু (value) পেয়ে থাকেন এবং যদি তারা মনে করেন যে পেইড কনটেন্ট এর জন্য সাবস্ক্রাইব করে তাদের লাভ হবে, তাহলে তারা অবশই টাকা খরচ করে সাবস্ক্রাইব করবেন।
বর্তমান সময়ে এই ধরণের subscription based model থেকে নানান ধরণের অ্যাপস গুলি প্রচুর টাকা আয় করে নিচ্ছেন।
৪. Affiliate marketing:
এফিলিয়েট মার্কেটিং এর বিষয়ে আপনি হয়তো অনেক শুনেছেন। ইন্টারনেট থেকে অনলাইন টাকা ইনকাম করার সব থেকে লাভজনক এবং কার্যকর উপায় হলো affiliate marketing। আর সত্যি বলতে, মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে আয় করার ক্ষেত্রেও এই উপায় অনেক কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
এফিলিয়েট মার্কেটিং, এমন একটি business model যেখানে আপনি অন্যান্য কম্পানির পণ্য (products) বা সেবা (services) গুলোকে বিক্রি করিয়ে কমিশন (commission) আয় করতে পারবেন।
Affiliate marketing করার জন্য আপনাকে একটি বা একাধিক কম্পানির affiliate program এর সাথে সংযুক্ত হতে হবে।এক্ষেত্রে, আপনার app এর বিষয়ের সাথে রিলেটেড একটি ভালো affiliate program-এর সাথে আপনাকে যুক্ত হতে হবে।
Affiliate program-এর সাথে যুক্ত হওয়ার পর, আপনি বিভিন্ন অন্যান্য কোম্পানির apps, products বা services গুলো নিজের app এর মধ্যে প্রচার (advertise) করতে পারবেন।
আর যখনি কোনো ইউসার আপনার প্রচার করা apps, products বা services গুলোতে click করে সেগুলোকে কিনে নিবেন, তখন আপনি টাকা পাবেন।
মনে রাখবেন, affiliate program join করার পর আপনাকে apps, products বা services গুলোকে promote করার জন্য একটি বিশেষ affiliate link দেওয়া হবে। আর সেই দিয়ে দেওয়া affiliate link আপনাকে নিজের app মধ্যে শেয়ার (share) বা ডিসপ্লে করতে হবে।
৫. Sponsorship:
যদি আপনার কাছে একটি দারুন app idea রয়েছে যেটা আপনার হিসেবে ভবিষ্যতে প্রচুর সফল হবে, তাহলে এক্ষেত্রে আপনি নিজের app এর জন্য একটি sponsor খুঁজতে পারেন।
App এর জন্য একজন sponsor খুঁজতে পারলে আপনি monthly subscription হিসেবে টাকা পেতে থাকবেন। তবে, sponsor থেকে টাকা নেওয়ার বিপরীতে আপনাকে স্পনসর এর হিসেবে কিছুটা design এবং features গুলো নিজের app এর মধ্যে যোগ করতে হয়।
যদি আপনি একটি দারুন এবং ইউনিক ধারণার (idea) সাথে নিজের app তৈরি করতে চলেছেন, তাহলে sponsorship পাওয়ার সুযোগ থাকছে।এরকম অনেক বড় বড় কোম্পানি গুলো অবশই রয়েছে যারা স্পনসরশিপ দিয়ে থাকেন।
স্পনসরশিপ মানে হলো, আপনাকে সব রকমের আর্থিক সাহায্য করা হবে অ্যাপ টিকে সফল করার ক্ষেত্রে।
তবে, আপনাকে স্পনসরশিপ পাওয়ার আগে প্রচুর কোম্পানির কাছে গিয়ে তাদেরকে ভরসা দিতে হবে এবং বুঝাতে হবে যে আপনার আইডিয়াটি (idea) অনেক ভালো এবং ইউনিক যেটা ভবিষ্যতে অবশই সফল হবে।
৬. Referral Marketing:
এপস তৈরি করে ইনকাম করার ক্ষেত্রে referral marketing গুরুত্ব কিন্তু কম থাকছেনা। আপনারা হয়তো এরকম প্রচুর apps ব্যবহার করেছেন যেগুলো আপনাদের share, invite এবং রেফার করে টাকা ইনকাম করার সুযোগ দিয়ে থাকে।
যদি আপনার apps-টি প্রচুর লোকেরা ব্যবহার করছেন এবং আপনার কাছে ভালো এবং বড় সংখ্যায় শ্রোতা (audience) রয়েছে, তাহলে আপনি কোনো brand, product বা অন্যান্য apps গুলোকে প্রোমোট বা রেফার করে নিজের অ্যাপ থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
এটাও এক ধরণের affiliate marketing এর প্রক্রিয়া বলেই বলা যেতে পারে। তবে, এখানে আপনাকে কোনো ধরণের affiliate program join করতে হয়না, এবং আপনি সরাসরি কোম্পানির সাথেই চুক্তি বা যোগাযোগ করে থাকেন।
৭. Freelance App Development করে ইনকাম:
যদি আপনি নিজেই apps তৈরি করতে জানেন এবং app development রিলেটেড প্রচুর জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা আপনার আছে, সেক্ষেত্রে অন্যান্য কোম্পানি বা ব্যক্তিদের জন্য mobile apps তৈরি করেও আপনি প্রচুর টাকা ইনকাম করে নিতে পারবেন।
ইন্টারনেটে এমন নানান freelancing platform/website গুলি রয়েছে যেগুলিতে গিয়ে app development রিলেটেড নতুন নতুন কাজ গুলি সহজেই পেয়ে যাবেন।
বর্তমান সময়ে, যেকোনো ধরণের app তৈরি করার জন্য একজন অ্যাপ ডেভেলপার কমেও ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আরামে পেয়ে যান। এক্ষেত্রে, যদি আপনি প্রতি মাসে ২-টি mobile app/game-ও তৈরি করে থাকেন, তাহলে মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আরামে ইনকাম হবে।
Apps install করার জন্য Google আমাদের টাকা দিবে কি?
অনেকেই ভেবে থাকেন যে, Google play store থেকে apps download হওয়ার বিপরীতে গুগল app developers দের টাকা দিয়ে থাকে। তবে, এটা কিন্তু সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। User দ্বারা apps install করার বিপরীতে Google কোনো app developers দের টাকা দেয়না।
আপনার apps যদিওবা লক্ষ লক্ষ বা কোটি কোটি লোকেরা install করে রেখেছেন তথাপিও আপনি গুগল থেকে কোনো টাকা পাবেননা। হে এটা একেবারেই সত্যি যে, আপনার apps যত বেশি লোকেরা download এবং install করে ব্যবহার করবেন, ততই অধিক ইনকাম হওয়ায় সম্ভাবনা বাড়বে।
কেননা, একটি এপস বানিয়ে টাকা ইনকাম করার ক্ষেত্রে ওপরে আমি যেগুলো উপায় বলেছি,মূলত প্রায় প্রত্যেক app developers-রা উপরে বলে দেওয়া এই উপায় গুলো ব্যবহার করেই নিজেদের এপস থেকে টাকা আয় করেন।
আর, বলে দেওয়া ইনকাম এর এই উপায় গুলোর মাধ্যমে প্রচুর ইনকাম কেবল তখন করতে পারবেন যখন আপনার apps গুলো অধিক লোকেরা ব্যবহার করবেন।
Google play store এর মাধ্যমে আপনি আপনার অ্যাপ এর জন্য নতুন নতুন users অবশই পেতে পারবেন। Users রা সরাসরি প্লে স্টোর থেকে আপনার অ্যাপ ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন।
তবে, আপনার অ্যাপ এর মধ্যে চলে আসা traffic গুলোর সাহায্যে কোন উপায় ব্যবহার করে টাকা ইনকাম করবেন, সেটা সম্পূর্ণ ভাবে আপনার সিদ্ধান্ত।
Note: Google Play Store আপনাকে আপনাকে app download-এর জন্য কেবল তখনই টাকা দিবে যখন আপনার একটি paid android app থাকবে। free android apps গুলি যতই ডাউনলোড করা হোক না কেন, এক্ষেত্রে play store কোনো টাকা দিবেনা।
Google AdMob কি?
AdMob হলো একটি অনলাইন mobile advertising company যেটা Google-দ্বারা পরিচালিত করা হয়।
সোজা ভাবে বুঝতে হলে, AdMob হলো এমন একটি প্লাটফর্ম যেটাকে কাজে লাগিয়ে app developers-রা তাদের তৈরি করা apps গুলিতে বিজ্ঞাপন (Ads) দেখাতে পারেন।
২০০৬ সালে চালু হওয়া এই AdMob platform-টি ব্যবহার করে আপনি আপনার mobile app-এর মধ্যে in-app ads গুলিকে যুক্ত করতে পারবেন।
এর দ্বারা আপনারা High-performing ad formats, Automated tools, highest CPM, এবং এই ধরণের নানান features গুলি পাবেন যার জন্য অন্যান্য advertising network গুলির তুলনায়, AdMob-থেকে তুলনামূলকভাবে অধিক টাকা ইনকাম করার সুযোক পাওয়া যায়।
এপস তৈরি করে ইনকাম করার জন্য কিসের প্রয়োজন?
Apps বানিয়ে টাকা আয় করার জন্য আপনার কাছে মূলত একটি computer/laptop এবং internet connection থাকতে হবে। এর বাইরেও, আপনাকে নিজের একটি mobile app তৈরি করতে হবে যার জন্যে উপরে বলে দেওয়া নানান free app maker website গুলি ব্যবহার করতে পারবেন।
আপনি চাইলে কিছু টাকা খরচ করে professional app developers দ্বারাও নিজের app তৈরি করিয়ে নিতে পারবেন।
নিজের mobile app-টি কিভাবে Google Play Store-এর মধ্যে যুক্ত করবেন, সেই বিষয়েও আপনার জেনেনিতে হবে। তাই, আপনার কাছে একটি Google Play Store Publisher Account-ও অবশই থাকতে হবে।
শেষে, যদি আপনি নিজের মোবাইল অ্যাপে in-app advertisement দেখিয়ে টাকা আয় করার কথা ভাবছেন, সেক্ষেত্রে আপনার কাছে একটি Google AdMob Account থাকা ও জরুরি।
এর বাইরে, মোবাইল অ্যাপ থেকে ইনকাম করার জন্য আর কিসের প্রয়োজন হবে, সেটা নির্ভর করছে, ইনকামের জন্য আপনি অন্যান্য কি কি উপায় ব্যবহার করছেন, সেটার উপরে।
FAQ:
সত্যি বলতে, একটি অ্যাপ তৈরি করে আমরা আনলিমিটেড টাকা ইনকাম করার সুযোগ পেতে পারি। তবে এর জন্য আমাদেরকে সঠিক নিয়ম, প্রক্রিয়া এবং উপায় গুলি অবশই অনুসরণ করতে হয়। এক্ষেত্রে, আপনার মোবাইল অ্যাপটি যত বেশি লোকেরা ডাউনলোড করে ব্যবহার করবেন এবং অ্যাপ এর মধ্যে ট্রাফিক যত অধিক থাকবে, ততটাই অধিক ইনকাম আপনি করতে পারবেন।
যদি আপনার অ্যাপটি একটি পেইড অ্যাপ হয়ে থাকে, কেবল তখনই Google আপনাকে অ্যাপ ডাউনলোড এর জন্য টাকা দিয়ে থাকে। তবে, যদি আপনার অ্যাপটি একটি ফ্রি অ্যাপ, সেক্ষেত্রে অ্যাপটি যতই ডাউনলোড হোক না কেন, গুগল থেকে অ্যাপ ডাউনলোড এর জন্য কোনো টাকা আপনি পাবেননা।
আপনি যদি কোনো ধরণের কোডিং এর নলেজ ছাড়া একটি মোবাইল app তৈরি করে নিতে চাইছেন, সেক্ষেত্রে অনলাইনে এমন নানান app maker website গুলি রয়েছে যেগুলির দ্বারা কোনো ধরণের কোডিং ছাড়া অ্যাপ তৈরি করা যাবে। যেমন, Appy Pie, Mobiroller, Appsgeyser.com, Mobincube, ইত্যাদি।
আমাদের শেষ কথা,,
তাহলে বন্ধুরা, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানলাম, অ্যাপ তৈরি করে কিভাবে আয় করা যায় (How to earn money creating apps)। অ্যাপ তৈরি করে আয় করার জন্য ওপরে বলা উপায় গুলোই মূলত ব্যবহার করা হয়। তাই, যদি আপনিও নিজের একটি এন্ড্রয়েড এপস তৈরি করে টাকা ইনকাম করতে চাইছেন, তাহলে ওপরের উপায় গুলো ব্যবহার করুন।
আমি পরামর্শ দিবো, আপনি গুগল এডমোব (Google Admob) এর মাধ্যমে নিজের অ্যাপ এর মধ্যে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে টাকা আয় করুন। কারণ, প্রায় প্রত্যেকেই এই মাধ্যমেই অনেক সহজেই নিজের অ্যাপ থেকে ইনকাম করছেন।
নিজের একটি app তৈরি করে সেখান থেকে নিয়মিত টাকা আয় করার উপায় গুলো যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশই আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন। এছাড়া, আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোনো ধরণের প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে আমাকে নিচে কমেন্ট করে অবশই জানিয়ে দিবেন।
নিজের মোবাইল এপ্লিকেশন এর মাধ্যমে যে টাকা ইনকাম হবে , সেই টাকা কিভাবে উত্তোলন করব ?
টাকা ইনকাম করার জন্যে যেই প্রোগ্রামটি ব্যবহার করছেন সেখানে টাকা তুলার জন্য নানান অপসন গুলি পাবেন। যেমন, bank transfer, PayPal, ইত্যাদি।