ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার কথা ভাবছেন কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং করলে কি কি লাভ হবে বা ফ্রিল্যান্সিং করলে সেটা আপনার কোনো কাজে লাগবে কি না, এই ধরণের প্রশ্নগুলি আপনার মাথায় ঘুরছে?
দেখুন, যদি আপনি কোনো বিশেষ দক্ষতা বা কৌশল জানেন, সেক্ষেত্রে আমার হিসেবে আপনার একবার হলেও ফ্রিল্যান্সিং কাজ করে দেখা উচিত। কেননা, এর দ্বারা কেবল টাকা ইনকাম করার বাইরেও, অন্যান্য নানান বিষয় গুলি আপনারা শিখতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং কেন করা উচিত?
আমাদের ফাস্ট-লাইফস্টাইলে ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্সের বিষয়টা খুবই জরুরি হয়ে উঠেছে। এখনকার সময়ে ৯টা-৫টা ডেস্ক জব ছেড়ে অনেকেই ফ্রীলান্সিংকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।
যেহেতু, এটা একটা স্বাধীন পেশা, তাই এখানে আপনিই আপনার বস। আর, স্বাধীনভাবে ইনকামের যে মজাই আলাদা, সেটা অনেকেই বুঝতে পারছেন।
এছাড়াও, একজন ফ্রীলান্সার হয়ে নিজের ইচ্ছেমতো একসাথে একাধিক ক্লায়েন্টের হয়েও কাজ করা সম্ভব। এখানে যেহেতু প্রতিটা কাজের বিনিময়ে রোজগারের সুবিধা রয়েছে, তাই এখান থেকে ইনকাম করার সুযোগও অনেকটাই বেশি থাকে।
সোজা ভাবে বলতে গেলে, নিজের দক্ষতা এবং কৌশল গুলিকে কাজে লাগিয়ে স্বাধীন ভাবে কাজ করে এক্সট্রা টাকা ইনকাম করার ক্ষেত্রে freelancing আপনার অনেক কাজে লাগবে।
তাহলে, ফ্রিল্যান্সিং কেন করা উচিত?
ফ্রীলান্সিং করার মাধ্যমে, আপনার কাজের অভিজ্ঞতা বাড়বে, অনলাইনে কাজ পাওয়া এবং জমা করার কৌশল গুলি শিখবেন, পোর্টফোলিও শক্তিশালী হয়, এবং পাশাপাশি প্রচুর ক্লায়েন্ট দের সাথে চেনা পরিচয় হয়।
অবশই পড়ুন:
- নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং এর সবচেয়ে সহজ কাজ কোনটি?
- নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার ১১টি টিপস
- ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য কিসের প্রয়োজন?
এখন চলুন, দেরি না করে বিস্তারিত জানি ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুবিধাগুলো কি কি?
ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুবিধা:
নিচে ফ্রীলান্সিং এর সুবিধা গুলি একে একে বলা হয়েছে।
১. স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ:
একজন ফিক্সড জব এমপ্লয়ীকে নির্দিষ্ট লম্বা অফিস আওয়ারেই কাজ করতে হয়। আবার, কাজ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও সেরকম কোনো স্বাধীনতা দেওয়া না।
অন্যদিকে, একজন ফ্রীলান্সার হিসেবে নিজের ইচ্ছেমতো কাজের সময় ও ডিউরেশন ঠিক করে নেওয়া যায়। এমনকি, প্রয়োজনে আপনি কাজ থেকে যেকোনো দিন বা উইক অফও নিতে পারবেন।
এছাড়াও, ফ্রীলান্সিং কাজে ঘন্টা বা প্রজেক্টের ভিত্তিতে আয়ের সুযোগ থাকে। ইচ্ছে হলে আপনি শর্ট বা লং-টার্ম প্রজেক্টও বাছতে পারেন।
আপনার ক্লায়েন্টের দেওয়া রেট বা কাজ পছন্দ না হলে, সেই ক্লায়েন্টকে রিজেক্ট করার সুযোগও আপনার হাতেই থাকে। এক কথায় ফ্রীলান্সিং কেরিয়ারে আপনিই আপনার ইচ্ছের মালিক।
২. ফ্লেক্সিবল ওয়ার্কিং আওয়ার:
ফ্রীলান্সিং কাজের ক্ষেত্রে সবথেকে ভালো বিষয় হল এর ফ্লেক্সিবল ওয়ার্কিং আওয়ার।
এখানে আপনি দিনের যেকোনো সময়ে কাজের জন্যে বাছতে পারবেন। নিজের ক্লায়েন্টের ডেডলাইন ফলো করে দিনের যেকোনো একটা সময়ে কাজ করা যায়।
ধরুন আপনি সোমবার ছুটি নিয়ে তার বদলে রবিবার রাতেও কাজ করতে পারবেন। তবে, ফ্রীলান্সার হতে গেলে অবশ্যই টাইম ম্যানেজমেন্টের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
কারণ, ক্লায়েন্টের ডেডলাইন অনুযায়ী কাজ জমা দেওয়াটা ফ্রীল্যান্সারদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।
৩. স্বাধীন পরিচালনা:
যেহেতু, একজন ফ্রীল্যান্সার সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করেন, তাই সেল্ফ-ম্যানেজমেন্ট বিষয়টাও কিন্তু তার নিজের হাতেই থাকে।
এখানে আপনি প্রথমেই ইচ্ছেমতো আপনার কাজের পরিমাণ বাছার স্বাধীনতা পাবেন। এমনকি, আপনার কাজের শিডিউল, পেমেন্টের হিসাবপত্র থেকে শুরু করে ক্লায়েন্ট ম্যানেজমেন্টের যাবতীয় দ্বায়িত্ব আপনার উপরই থাকবে।
মনে রাখা দরকার যে, এই ধরণের পেশাতে কাজের প্রেসার সবসময়েই কমতে বা বাড়তে থাকে।
হয়তো কোনো সপ্তাহে অনেক কাজের চাপ যাবে বা অন্য সপ্তাহে কাজের চাপ কম থাকবে। তাই, সমস্ত অবস্থাতেই পরিচালনার দ্বায়িত্ব কেবলমাত্র ফ্রীলান্সারদেরই নিতে হয়।
৪. রিমোট ওয়ার্কিং লোকেশন:
বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সিং কাজেই যেকোনো লোকেশন থেকেই কাজ করা সম্ভব। তাই, অনেক ফ্রীলান্সাররাই রিমোট ওয়ার্কিং লোকেশনের জন্যেই এই পেশাকে পছন্দ করে থাকেন।
একজন ফ্রীলান্সার হিসেবে ট্রাভেল করতে করতেও ক্লায়েন্টের কাজ করা সম্ভব। কেননা, ফ্রীলান্সিংয়ের জন্যে বেসিক কাজের সেটআপ হলেই চলে (যেমন- একটা স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ এবংস্টেডি ইন্টারনেট কানেকশন)।
তবে, অনেক কাজের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের লোকেশনের কাছাকাছিও থাকতে হতে পারে। এছাড়াও, ফ্রীলান্সের সুবিধা হল এই যে, টাইম জোন মিলিয়ে এখানে ইন্টারন্যাশনাল ক্লায়েন্টেরও কাজ করা যায়।
তাই, এখানে বিদেশি কার্রেন্সিতেও আয়ের সুযোগ রয়েছে।
৫. আয়ের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ:
ফ্রিল্যান্সিং কেরিয়ারে আপনার আয়ের সমস্ত ব্যাপারটাই আপনার নিজের উপর নির্ভর করে। এখানে কাজের চাপ ও রেট সবটাই আপনার ইচ্ছে এবং কাজের এক্সপেরিয়েন্সের উপর ডিপেন্ড করছে।
এছাড়াও, এই ধরণের কাজের ক্ষেত্রে মার্কেট রেটও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনি নিজের স্কিল বাড়িয়ে, ক্লায়েন্ট নেটওয়ার্ক তৈরী করে এবং ভালো পোর্টফোলিও বানিয়ে নিজের পেমেন্ট রেট বাড়াতে পারবেন।
এখানে নিজের আর্থিক চাহিদা, লাইফস্টাইল এবং কেরিয়ার গোলের উপর নির্ভর করে ফ্রীলান্সিং কেরিয়ার বানানো যায়।
৬. দক্ষতা বাড়ানোর সুবিধা:
যেহেতু, আপনি এখানে বিভিন্ন ধরণের ক্লায়েন্টের প্রজেক্টগুলোতে কাজ করেন, তাই এখানে বিভিন্ন ধরণের কাজের অভিজ্ঞতা পাওয়া সম্ভব।
যে কারণে, আপনি নিজের স্কিল বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগও পাবেন। অন্যান্য ফিক্সড জবের তুলনায় এখানে শেখার ও স্কিল বাড়ানোর সুযোগ অনেকটাই বেশি থাকে।
এমনকি, বিভিন্ন ফ্রীলান্সিং ওয়েবসাইট থেকে আপনি অনালাইনে নানান ধরণের ফ্রীলান্সিং কোর্সও করে নিতে পারেন।
৭. জব সিক্যুরিটি:
ফিক্সড-স্যালারির চাকরির তুলনায় ফ্রীলান্সিং জবের ক্ষেত্রে সিক্যুরিটি অনেকটাই বেশি। অন্যান্য চাকরির ক্ষেত্রে আপনার স্যালারি একমাত্র একজন সিঙ্গল এমপ্লয়ারের উপর নির্ভর করে।
কিন্তু, যেহেতু ফ্রীলান্সিংয়ে আপনি একের বেশি ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করতে পারেন, তাই একজন বা দুজন ক্লায়েন্ট চলে গেলেও আপনি আর্থিক দিক থেকে বিপদে পড়বেন না।
এমনকি, আপনি নিজের ইচ্ছেমতো নতুন ক্লায়েন্টও খুঁজতে পারবেন। এছাড়াও, ফ্রীল্যান্সার হয়ে আপনি একাধিক ইন্ডাস্ট্রির ক্লায়েন্টদের কাজও নিতে পারেন।
৮. নিজের ফিল্ডে স্পেশ্যালাইজ করা:
ফ্রিল্যান্সিং-এর আরও একটা বড় সুবিধা হল এই যে, এখানে আপনি নিজের স্পেশাল স্কিল বা অভিজ্ঞতাকে বাড়িয়ে তুলে নিজেকে একজন এক্সপার্ট ফ্রীলান্সার হিসেবে তৈরী করতে পারবেন।
অফিস সেটআপের বদলে ফ্রীলান্সিং পেশাতে নিজের ইন্টারেস্ট ও এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে কাজ করারও অনেকটা সুবিধা থাকে।
এমনকি, একজন ফ্রীলান্সার হয়ে নিজের ফিল্ডে কাজের বিশেষ অভিজ্ঞতা থাকলে, আপনি সহজেই নিজের পরিচিতি গড়ে তুলতে পারবেন।
অন্যান্য যেকোনো কেরিয়ার অপশনের মতো ফ্রীলান্সিং কেরিয়ারের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু অসুবিধা বা জটিলতা থাকে। এখানেও আপনি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে পারেন।
চলুন তাহলে জানি যে, ফ্রীলান্সিং কাজের অসুবিধাগুলো কি কি হতে পারে?
অবশই পড়ুন: কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শিখবো এবং শুরু করবো?
ফ্রীলান্সিং করার অসুবিধা:
ফ্রিল্যান্সিং কেন করা উচিত? এর সুবিধা ও লাভ গুলি কি? এই বিষয়ে জানলেন তো? চলুন, এখন আমরা নিচে ফ্রিল্যান্সিং এর অসুবিধা গুলি নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।
১. নো ওয়ার্ক, নো পে:
আপনার শরীর খারাপ থাকুক কিংবা কোথাও ঘুরতে যান, ফ্রীলান্সিং কাজের ক্ষেত্রে কিন্তু ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’।
যেহেতু, এখানে আপনাকে প্রতি কাজের জন্যে পে করা হয়, আর কাজ না করলে খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনি পেমেন্ট পাবেন না।
তাই, ফ্রীলান্সিংয়ে একটানা কাজ না করে থাকা সম্ভব নয়।
২. সমস্ত দায়িত্ব একা নেওয়া:
ফ্রীলান্সিং পেশা কিন্তু বিজনেস চালানোর মতোই জটিল। যেহেতু, আপনিই আপনার বস, তাই আপনাকেই নিজের ক্লায়েন্ট খুঁজতে হবে, ক্লায়েন্টের সাথে সঠিক সম্পর্ক রাখতে হবে।
এর পাশপাশি আপনাকে অ্যাকাউন্টের হিসাবপত্র ও পেমেন্টের জন্যে বিলিংয়ের কাজও নিজেকেই করতে হবে। এর পাশাপাশি ক্লায়েন্টকে বেস্ট সার্ভিস দেওয়ার সমস্ত দায়িত্বটাও থাকে, আপনারই উপর।
এমনকি, কাজের জন্যে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও সফটওয়্যারের ব্যবস্থাও আপনাকেই করতে হয়। এতো কিছু দায়িত্ব সামলানো কিন্তু মোটেও সহজ কাজ নয়।
৩. একাকিত্ব:
ফ্রীলান্সিংয়ের ক্ষেত্রে যেহেতু আপনি কোনোরকমের কোনো অফিস বা কোম্পানিতে সরাসরি যুক্ত থাকেন না। তাই, সমস্ত কাজই আপনাকে একাই সামলাতে হয়। অনেকদিন ধরে এইভাবে একা কাজ করতে থাকলে, আপনার নিজেকে একলা মনে হতে পারে।
৪. অনির্দিষ্ট ইনকাম:
এই পেশাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ইনকামের চান্স খুবই কম। কারণ, এখানে ক্লায়েন্টরা তাদের ইচ্ছেমতো প্রজেক্ট দিয়ে থাকেন।
আবার, ক্লায়েন্ট কনট্র্যাক্ট রিনিউ না করলে, সেখান থেকে ইনকাম করার কোনো সুযোগও থাকে না।
অন্যদিকে, অনেক সময় ক্লায়েন্ট আপনার পেমেন্টের পরিমাণও কমিয়ে দিতে পারেন। এমনকি, মার্কেট রেট পড়ে গেলেও রোজগারের পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে।
৫. কোনোরকমের গাইডেন্স না পাওয়া:
এটা আসলে একটা স্বাধীন পেশা।
তাই এখানে যাবতীয় সিদ্ধান্তের দায়িত্বও আপনার নিজের উপরই থাকে।যে কারণে, আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কারোর গাইডেন্স পাওয়ার চান্সও খুবই কম।
তাই, সঠিকভাবে কেরিয়ার ডিসিশন নেওয়াটা অনেক সময়ই বেশ কঠিন একটা কাজ হয়ে দাঁড়ায়।
৬. পেমেন্ট পাওয়া নিয়ে সমস্যা:
দেরিতে পেমেন্ট করেন এমন ক্লায়েন্টদের নিয়ে অনেক সময়েই ফ্রীলান্সাররা বেশ সমস্যাতে পড়েন।
অনেক ক্ষেত্রে, এমন অনেক ক্লায়েন্ট থাকেন, যারা কাজ করিয়ে নিয়ে পেমেন্ট না করেই চলে যান। এইসব সমস্যার কারণে ফ্রিল্যান্সিং কিন্তু বেশ অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং পেশা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
উপসংহার:
তাহলে বন্ধুরা, যদি আপনিও ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার কথা ভাবছেন, তবে ফ্রিল্যান্সিং করলে কি লাভ হবে, ফ্রিল্যান্সিং এর সুবিধা ও অসুবিধা গুলি কি এবং ফ্রিল্যান্সিং করা উচিত কি না, এই ধরণের প্রশ্ন গুলি আপনার মাথায় অবশই চলে আসতে পারে।
মনে রাখবেন, ফ্রিল্যান্সিং এমন একটি পেশা যেখানে শুরুতে নিজের খালি সময়ে কাজ করলেই হয়ে যাবে। এছাড়া, আপনার কৌশল এবং দক্ষতা গুলির উপর নির্ভর করেই এখানে কাজ পাবেন।
তাই, যদি আপনি ঘরে বসে নিজের খালি সময়ে কাজ করে এক্সট্রা টাকা ইনকাম করার কথা ভাবছেন, তাহলে আমার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং অবশই শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকুন।
আমার হিসেবে, প্রত্তেকজন ব্যক্তি তাদের জীবনে একবার হলেও ফ্রিল্যান্সিং কাজ করে দেখলে ভালো।
অবশই পড়ুন:
- শিক্ষার্থীদের জন্য সেরা ৯টি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট
- মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো?
- ফ্রিল্যান্সিং এ কোন কাজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি?