Google Play Store-এর মধ্যে থাকা হাজার হাজার ফ্রি এন্ড্রয়েড অ্যাপস গুলো আসলে কিভাবে টাকা ইনকাম করছে? আমার মতো আপনিও হয়তো একবার হলেও এই প্রশ্নটি নিয়ে চিন্তা করেছেন। অ্যাপস গুলো যদি সম্পূর্ণ ফ্রীতেই উপলব্ধ করা হচ্ছে, তাহলে কেন এতটা টাকা খরচ করে, লোকেরা এই ধরণের ফ্রি অ্যাপস গুলো বানিয়ে গুগল প্লে স্টোরে ছাড়ছেন? চিন্তা করে দেখেছেন কি?
এমনিতে ফ্রি এন্ড্রয়েড অ্যাপস গুলো ব্যবহার করার জন্য আমাদের থেকে সরাসরি কোনো ধরণের টাকা নেওয়া হয়না। তবে, অ্যাপ তৈরি করা ডেভেলপাররা এক্ষেত্রে এমন নানান কৌশল গুলিকে কাজে লাগিয়ে থাকেন যেগুলির দ্বারা অ্যাপ ব্যবহারকারীদের মাধ্যমেই নানান ভাবে টাকা ইনকামের সুযোগ তারা তৈরি করে নিতে পারছেন। আর আজকের এই আর্টিকেলে, এন্ড্রয়েড অ্যাপস থেকে ইনকাম করার এই প্রতিটি কৌশল গুলো নিয়েই আমরা আলোচনা করবো।
তাই, যদি আপনিও ভাবছেন নিজের একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপস তৈরি করে সেটিকে গুগল প্লে স্টোরে আপলোড করে অর্থ উপার্জন করতে, তাহলে এক্ষেত্রে একটি ফ্রি এন্ড্রয়েড অ্যাপ দ্বারা কি কি মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারবেন, সেই বিষয়ে সব থেকে আগেই আপনাকে জেনে রাখতে হবে।
একটি ফ্রি মোবাইল অ্যাপ কি কি মাধ্যমে টাকা ইনকাম করে? উপার্জনের রাস্তা
ফ্রি এন্ড্রয়েড অ্যাপস গুলো নিচে বলে দেওয়া এই নানান উপায় গুলোকে কাজে লাগিয়ে অনলাইন টাকা ইনকাম করে থাকেন।
১. In-App Advertising:
একটি ফ্রি মোবাইল অ্যাপ থেকে টাকা আয় করার সব থেকে জনপ্রিয় এবং সহজ উপায়টি হলো এই ‘In-App Advertising‘।
মনে করে দেখুন তো, যখন আপনি কোনো ফ্রি অ্যাপ মোবাইলে ইনস্টল করে থাকেন, অ্যাপটি ওপেন করার সাথে সাথে কি আপনাকে কিছু বিজ্ঞাপন (image বা video) দেখানো হয়? অনেক সময়, মোবাইলে গেম খেলার সময়ও এক্সট্রা লাইফ বা কয়েন পাওয়ার জন্য আপনাকে বিজ্ঞাপন গুলো দেখতে হয়।
আসলে, app developers-রা তাদের app গুলোতে বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য এক বা একের অধিক Mobile Advertising Company গুলির সাথে টাইআপ করে থাকেন। আর এমনই একটি অনেক জনপ্রিয় Mobile Advertising Company হলো, ‘Google AdMob’।
এবার, এই মোবাইল এড নেটওয়ার্ড/কোম্পানি গুলোর থেকে দিয়ে দেওয়া বিজ্ঞাপনের কোড গুলো অ্যাপ এর মধ্যে যুক্ত করতে হয়। এতে, মোবাইল অ্যাপ এর মধ্যে ইমেজ, ভিডিও, টেক্সট ইত্যাদি নানান ধরণের বিজ্ঞাপন গুলো চলে আসে।
এবার, যখনই আমার এবং আপনার মতো একজন ইউজার সেই ফ্রি অ্যাপটি ব্যবহার করবেন, তখন সেখানে নানান ধরণের বিজ্ঞাপন দেখানো হবে এবং যতবার এবং যত অধিক লোকেরা সেই বিজ্ঞাপন গুলো দেখবেন অথবা সেগুলিতে ক্লিক করবেন, ততটাই অধিক টাকা ইনকাম করবেন অ্যাপ এর মালিক।
কি কি ধরণের বিজ্ঞাপন দেখানো যায়:
- Banner Ads: এগুলো আকারে অনেক ছোট হয় এবং মোবাইল স্ক্রীনের একেবারে উপরে বা নিচে দেখানো হয়।
- Interstitial Ads: মোবাইলের সম্পূর্ণ স্ক্রিন কভার করে চলে আসে এই বিজ্ঞাপন। কিছু নির্দিষ্ট সময় পর পর দেখবেন এই এড।
- Video Ads: প্রিমিয়াম কন্টেন্ট এবং রিওয়ার্ড পাওয়ার বিপরীতে ছোট ছোট ভিডিও গুলো দেখতে বলা হয়।
- Native Ads: অ্যাপ এর মধ্যে থাক নানান কন্টেন্ট গুলোর সাথে দেখানো হয় এই বিজ্ঞাপন।
২. In-App Purchases:
নানান ফ্রী মোবাইল অ্যাপস গুলো আছে যেগুলো সম্পূর্ণ ফ্রীতে ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়। আবার এই অ্যাপস গুলোর মধ্যেই এমন কিছু প্রিমিয়াম ফীচার, প্ল্যান, ভার্চুয়াল প্রোডাক্ট বা কয়েন গুলো উপলব্ধ করা হয় যেগুলোকে চাইলে কিনে ব্যবহার করতে পারবেন আপনি।
উদাহরণ স্বরূপ, গুগল প্লে স্টোরে ভিডিও এডিট করার প্রচুর ভালো ভালো ফ্রি অ্যাপস গুলো আপনারা পাবেন। আর, এদের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকটি অ্যাপই কিন্তু In-App Purchases-এর উপায়টিকে কাজে লাগিয়ে অ্যাপ ব্যবহারকারীদের থেকে প্রচুর পরিমানে অর্থ উপার্জন করে নিচ্ছেন।
কিভাবে? প্লে স্টোরে গিয়ে যেকোনো একটি ফ্রি ভিডিও এডিটর অ্যাপ মোবাইলে ডাউনলোড করুন। এবার, সেই অ্যাপ এর মধ্যে বেশিরভাগ ফীচার গুলো আপনারা ফ্রীতে ব্যবহার করতে পারলেও, সেখানে এমন কিছু কিছু জরুরি ফীচার অবশই থাকবে যেগুলোকে টাকা দিয়েই ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন, ভিডিও থেকে ওয়াটারমার্ক সরানো, হাই কোয়ালিটিতে আউটপুট ইত্যাদি।
এবার, হয়তো আমার বা আপনার কাছে ৫০-১০০ টাকা খরচ করে সেই প্রিমিয়াম ফীচার/প্ল্যান নেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে, সারা বিশ্বজুড়ে এমন লক্ষ লক্ষ লোকেরা আছেন যারা ৫০-১০০ টাকার মতো সামান্য পরিমান টাকার জন্য এতটা ভাবেননা।
আর এভাবেই, ৫০, ১০০, ২০০ টাকার মতো সামান্য পরিমান অর্থের বিপরীতে এই ফ্রি মোবাইল অ্যাপস গুলো প্রতিদিন হাজার হাজার লোকেদের কাছে তাদের এই প্রিমিয়াম ফীচার, অপসন, প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন, ডিজিটাল প্রোডাক্ট, গেম কয়েন, গেমের জন্য ডায়মন্ড ইত্যাদি বিক্রি করে ধুমিয়ে টাকা কামাচ্ছেন।
In-App Purchases-এর কিছু উদাহরণ:
- গেমিং এর ক্ষেত্রে এক্সট্রা লাইভ, বিশেষ যোগ্যতা, ইন-গেম কয়েন, শক্তিশালী অস্ত্র, ইত্যাদি কেনা।
- স্টোরেজ অ্যাপস এর ক্ষেত্রে, সামান্য টাকা দিয়ে অধিক ক্লাউড স্টোরেজ স্পেস গ্রহণ করা।
- ইউটিলিটি অ্যাপ এর ক্ষেত্রে নানান প্রিমিয়াম ফীচার, অপসন এবং টুলস গুলি।
৩. Freemium Model:
একটি ফ্রি মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে টাকা আয় করার আরেকটি দারুন উপায় হলো, Freemium model।
Google Play Store-এর মধ্যে আমরা এমন প্রচুর অ্যাপস পেয়ে যাই যেগুলো ডাউনলোড করে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কোনো ধরণের টাকা দিতে হয়না। তবে, ফ্রি অ্যাপসটিতে একেবারে সাধারণ ফীচার বা সার্ভিস গুলো প্রদান করা হবে। আর যদি আপনি অ্যাপটির প্রিমিয়াম ফীচার গুলোকে ব্যবহার করতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে অ্যাপ এর প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন নিতে হয়।
এই ধরণের ইনকাম মডেলে কাজ করা অ্যাপস গুলো শুরুতে সম্পূর্ণ ফ্রীতে অ্যাপসটি ব্যবহার করতে দিয়ে ভবিষ্যতে সেই ফ্রি ব্যবহারকারীকেই তাদের গ্রাহক হিসেবে পরিণত করে থাকেন।
উদাহরণ স্বরূপ, প্লে স্টোরে এমন নানান অ্যাপস আছে যেগুলোতে সম্পূর্ণ ফ্রীতে গান শোনা যাবে। তবে, যদি আপনি গান গুলোকে অফলাইনে শোনার জন্য ডাউনলোড করতে চান বা কোনো ধরণের বিজ্ঞাপন ছাড়া গান গুলো শুনতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে সেই অ্যাপ এর একটি প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন নিতে হয়। তাই, ফ্রি অ্যাপস গুলো এই ফ্রীমিয়াম মডেল থেকেও প্রচুর টাকা ইনকাম করে থাকেন বললে আমি ভুল হবোনা।
কিছু ফ্রীমিয়াম অ্যাপস এর উদাহরণ:
- গান শোনার অ্যাপস: ফ্রীতে গান শুনতে দিলেও বিজ্ঞাপন সরাতে বা গান ডাউনলোড করতে টাকা দিতে হয়।
- ডিজাইনিং অ্যাপস: ক্যানভার মতো এমন নানান ফটো এডিটিং অ্যাপস গুলোতেও সাবস্ক্রিপশন নেওয়া যায়।
- VPN অ্যাপস: প্রচুর ভিপিএন অ্যাপস পাবেন যেগুলোতে ফ্রীতে শুধুমাত্র একটি বা দুটি লোকেশন দেওয়া হয়। পেইড সাবস্ক্রিপশন নিলে প্রচুর লোকেশন এক্সেস করা যায়।
৪. Sponsorship/Partnerships:
যদি কোনো অ্যাপ গুগল প্লে স্টোর থেকে লক্ষ লক্ষ লোকেদের দ্বারা ডাউনলোড করা হয়েছে, তাহলে সেই অ্যাপ এর মালিক, একটি বা একাধিক ব্র্যান্ড বা কোম্পানির সাথে স্পনসরশিপ বা পার্টনারশীপ করেও প্রচুর টাকা ইনকাম করে থাকেন। এক্ষেত্রে একটি ফ্রি অ্যাপ ও সমানভাবেই লাভবান হতে পারবে।
আসলে ব্র্যান্ড এবং কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য এবং পরিষেবা গুলো অনলাইনে প্রচার করার জন্য নতুন নতুন উপায় খুঁজে থাকেন। আর এক্ষেত্রে, যদি কোনো অ্যাপ এতটা অধিক পরিমানে ডাউনলোড করা হয়েছে, তাহলে ব্র্যান্ড গুলোর জন্য এর থেকে ভালো মার্কেটিং এর মাধ্যম আর কি হতে পারে।
আর তাই, নানান কোম্পানি/ব্র্যান্ড গুলো এই ধরণের জনপ্রিয় ও অধিক ডাউনলোড হওয়া অ্যাপস গুলোকে ভালো অংকের টাকা দিয়ে কোম্পানিগুলোর পণ্য, ব্র্যান্ড বা পরিষেবাগুলোকে অ্যাপ এর দ্বারা প্রচার এবং বিক্রি করিয়ে থাকেন।
উদাহরণ স্বরূপ, মোবাইল গেমিং অ্যাপ এর মধ্যে বা যেকোনো অন্য মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করার সময়, আপনারা হয়তো Special Discount, Branded Content বা Exclusive Offers, লেখা অংশে অন্যান্য কোম্পানির অ্যাপস, গেম, বা পরিষেবা গুলোর প্রচার করার বিষয়টা একবার হলেও লক্ষ্য করেছেন।
অবশই পড়ুন: ChatGPT দিয়ে কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায়?
৫. Affiliate Marketing:
একটি ফ্রি মোবাইল অ্যাপস থেকে টাকা ইনকাম করার বর্তমানের সব থেকে সেরা উপায়টি হলো, এফিলিয়েট মার্কেটিং। এমন নানান ফ্রি অ্যাপস গুলো আছে যেগুলো কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন না দেখিয়ে বা পেইড সাবস্ক্রিপশন ছাড়া নিয়মিত অর্থ উপার্জন করে চলেছেন।
কেননা, যদি একটি অ্যাপের কাছে প্রচুর ব্যবহারকারীরা আছেন এবং অ্যাপটি নিয়মিত নতুন নতুন লোকেরা ডাউনলোডও করছেন, সেক্ষেত্রে অ্যাপ এর কনটেন্ট এর সাথে জড়িত অন্যান্য নানান কোম্পানির পণ্য এবং পরিষেবা গুলোকে আরামে প্রচার করা যায়।
আর প্রচার করা এফিলিয়েট পণ্য/পরিষেবা গুলো যখন আপনার অ্যাপ ইউজাররা কিনে নিবেন, তখন আপনিও কোম্পানির থেকে কিছু টাকা কমিশন হিসেবে পেয়ে যাবেন। যেমন, যদি কোনো অ্যাপ বই বা পড়াশোনার সাথে রিলেটেড কনটেন্ট তৈরি করছে, সেক্ষেত্রে অনলাইনে উপলব্ধ নানান ই-কমার্স সাইট গুলোর থেকে বই বা কোনো অনলাইন কোর্স নিজের অ্যাপ দ্বারা বিক্রি করাতে পারবেন অ্যাপ ডেভেলপাররা।
তাহলে এভাবেই, নানান অ্যাপস গুলো অন্যান্য টুলস, পরিষেবা, পণ্য গুলোকে নিজের অ্যাপ এর মধ্যে ডিসপ্লে করিয়ে সেগুলিকে নিজেদের অ্যাপ ব্যবহারকারীদের কাছে মার্কেটিং করিয়ে বিক্রি করিয়ে ইনকাম করে থাকেন।
রিলেটেড: আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং করে কিভাবে আয় করবেন?
আজকে আমরা কি শিখলাম?
এমন একটি মোবাইল অ্যাপ যেটি গুগল প্লে স্টোরে সম্পূর্ণ ফ্রীতে উপলব্ধ রয়েছে, সেটা আসলে কিভাবে টাকা ইনকাম করছে? এই প্রশ্নটি একবার হলেও আমাদের মাথায় এসেই থাকে। আর আশা করছি আজকের আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার পর আপনার এই প্রশ্নের একটি স্পষ্ট উত্তর আপনি পেয়ে গিয়েছেন।
একটি free mobile app নানান মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে, অ্যাপটির ব্যবহারকারীদের সংখ্যাও অনেক হতে হবে। যত অধিক ডাউনলোড সংখ্যা, যত অধিক অ্যাপ ইউজার, ততটাই অধিক ইনকামের সুযোগ থাকছে যেকোনো অ্যাপ এর কাছে।
এবার, যদি আপনিও ভাবছেন, নিজের একটি এন্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরি করে সেই অ্যাপ থেকে টাকা ইনকাম করতে, তাহলে অবশই পারবেন। এক্ষেত্রে, মোবাইল অ্যাপ তৈরি করে কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায়, নিয়ে লেখা আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়লেই সম্পূর্ণটা বুঝতে পারবেন।