আপনার ঘরের টিভি দেখার অভিজ্ঞতাকে আরো একটি স্তর ওপরে নিয়ে যেতে চাইছেন ? এক্ষেত্রে একটি স্মার্ট টিভি হতে পারে আপনার প্রিয় বন্ধু। কেননা, স্মার্ট টিভি গুলোতে রয়েছে একটি ফ্ল্যাট স্ক্রিন এবং সাথে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ। এছাড়া, সাথে রয়েছে শক্তিশালী প্রসেসর, হাই ডেফিনেশন এবং ইউজার-ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস। একবার চোখ বন্ধ করে সবটা একসাথে কল্পনা করে দেখুনতো। এখন হয়তো আপনি ভাবছেন, একটি টিভিতে এতকিছু থাকাটা কি সম্ভব ? তাই তো ?
বর্তমানের স্মার্ট টিভিগুলি সম্পূর্ণ ভাবে আপনার স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট গুলোর মতোই। এর দ্বারা আপনি একটি বড় ফ্ল্যাট স্ক্রিনে বিভিন্ন আকর্ষণীয় অনলাইন বৈশিষ্ট্যগুলির মজা নিতে পারবেন। কিন্তু স্মার্ট টিভি আসলে কি ? তারা কীভাবে কাজ করে ? একটি স্মার্ট টিভিতে কি কি করা যায় বা স্মার্ট টিভির সুবিধা গুলি কি কি ? আজকে আমরা এই সম্পূর্ণ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি।
স্মার্ট টিভি কি – What is a smart TV ?
স্মার্ট টিভি হলো একটি এমন ট্র্যাডিশনাল টেলিভিশন যেখানে সেট করা থাকছে ইন্টিগ্রেটেড ইন্টারনেট এবং ওয়েব 2.0 বৈশিষ্ট্য গুলো। এর দ্বারা ব্যবহারকারীরা তাদের টিভির সাহায্যে ভিডিও স্ট্রিম করা, ইন্টারনেট ব্রাউজ করা এবং ফটো দেখার কোনো কাজ গুলো করতে পারেন। Smart Tv গুলোকে আবার connected TV বলেও বলা হয়।
সোজা ভাবে বলতে গেলে, একটি স্মার্ট টিভি সম্পূর্ণ ভাবে একটি কম্পিউটারের মতোই কাজ করে থাকে। ই-মেল এবং ওয়ার্ড প্রসেসিং ফাংশন গুলো ছাড়া সবটাই কম্পিউটারের মতো। কারণ একটি স্মার্ট টিভিতে আপনি কম্পিউটারের মতোই, মিডিয়া স্ট্রিমিং, অ্যাপস ইন্সটল, গেমস্ এবং ওয়েব ব্রাউজিং-এর মতো অতিরিক্ত ফিচার গুলো পেয়ে থাকেন।
আমাদের স্মার্টফোনের মতোই, একটি স্মার্ট টিভি অসংখ্য ইন্টারনেট-সংযুক্ত পরিষেবা গুলো ব্যবহার করার সুবিধা দিয়ে থাকে যেই সুবিধা আপনি একটি সাধারণ টিভিতে কখনোই পাবেননা।
স্মার্ট টিভি কিভাবে কাজ করে ?
আপনি হয়তো এখন ভাবছেন যে একটি স্মার্ট টিভি কিভাবে ব্যবহার করতে হয় ? একটি স্মার্ট টিভি আপনার সেই পুরো টিভির মতোই একটি রিমোট এর সাহায্যে অন / অফ করতে হবে। তবে, বিভিন্ন ওয়েব 2.0 অনলাইন বৈশিষ্ট্য গুলোর আনন্দ নিতে হলে আপনাকে নিজের স্মার্ট টিভিটিকে ইন্টারনেট এর সাথে সংযুক্ত করতে হবে। টিভিতে ইন্টারনেট কানেক্ট করার জন্যে আপনাকে Wi-Fi ব্যবহার করতে হয়।
আপনার স্মার্টফোনের মতোই স্মার্ট টিভিতেও আগের থেকে ইন্সটল থাকা বিভিন্ন অ্যাপস গুলো আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া, নিজের পছন্দ মতো অন্যান্য অ্যাপস গুলো অ্যাপস স্টোর থেকে ডাউনলোড করার সুবিধাও রয়েছে।
একটি স্মার্ট টিভি ব্যবহার করাটা অনেক সোজা। একবার ইন্টারনেট সংযোগ করার পর, আপনি আপনার পছন্দ হিসেবে অ্যাপস গুলোতে click করে সেই অ্যাপটি ওপেন করে ব্যবহার করতে পারবেন। এটা সেই একই প্রক্রিয়া যেটা আপনি আপনি আপনার android smartphone-এর মধ্যে করে থাকেন। যেমন ধরুন, স্মার্ট টিভিতে YouTube ওপেন করে ভিডিও দেখার জন্যে আপনাকে আগে YouTube অ্যাপটিতে click করে সেটাকে ওপেন করে নিতে হবে।
একটি স্মার্ট টিভিতে কি কি করা যায় ?
এমনিতে এখন হয়তো আপনি বুঝেই গিয়েছেন যে আপনার সেই পুরোনো রেগুলার টিভির তুলনায় একটি স্মার্ট টিভি আপনার জন্যে অনেক কিছুই করতে পারে। তবে, আমার জন্যে একটি স্মার্ট টিভির মূল সুবিধা বা লাভ হলো এর মধ্যে থাকা ইন্টারনেট সংযোগ ক্ষমতা।
এছাড়া, এখানে কেবল একটি বাটন প্রেস করার মাধ্যমে আপনি Skype, Facebook, Netflix, YouTube ইত্যাদির মতো পরিষেবা গুলো ব্যবহার করতে পারছেন। আর এর জন্যে আপনাকে আলাদা করে কোনো অন্যান্য ডিভাইস বা ওয়্যার সংযোক করতে হয়না। Wi-Fi এর মাধ্যমে টিভিতে ইন্টারনেট সংযোগ করুন এবং নিজের পছন্দের অনলাইন পরিষেবা ব্যবহার করুন।
আপনি আপনার স্মার্ট টিভিতে অনেক কিছু করতে পারবেন।
তাহলে চলুন নিচে আমরা সম্পূর্ণ স্পষ্ট ভাবে জেনেনেই, একটি স্মার্ট টিভিতে কি কি করা যেতে পারে এবং স্মার্ট টিভির মূল সুবিধা গুলো কি কি।
১. অন-ডিমান্ড কন্টেন্ট স্ট্রিম করুন
আপনি আপনার স্মার্ট টিভির সাহায্যে যেকোনো ধরণের কনটেন্ট গুলো স্ট্রিম করতে পারবেন। আপনার যেই স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম পছন্দ সেটাকে ডাউনলোড করুন, লগইন করুন আর ব্যাস, এখন সেই OTT প্লাটফর্ম এর সমস্ত series এবং video গুলো নিজের স্মার্ট টিভিতে দেখতে পারবেন।
এছাড়া, আপনি চাইলে নিজের টিভিতে লাইভ টিভি দেখার আনন্দ নিতে পারেন। এরকম অনেক OTT platform গুলো রয়েছে যেগুলোতে বিভিন্ন TV channel গুলো ফ্রীতে বা অনেক সময় subscription নেওয়ার পর দেখতে দেওয়া হয়।
যদি আপনি একটি বড় HD স্ক্রিনে নিজের পছন্দের ওয়েব সিরিজ দেখতে চান, তাহলে একটি স্মার্ট টিভি দারুন একটি অপসন।
২. মোবাইল স্ক্রিন কাস্ট
আপনি যদি নিজের স্মার্টফোন, ল্যাপটপ বা ট্যাবলেট এর স্ক্রিন নিজের স্মার্ট টিভিতে দেখতে চাইছেন, মানে মোবাইলের স্ক্রিনটি টিভিতে ডিসপ্লে করতে চাইছেন, তাহলে স্মার্ট টিভির ক্ষেত্রে এটা করা সম্ভব। আপনি অনেক সহজে Apple Airplay বা Google Chromecast ব্যবহার করে এই কাজ করতে পারবেন।
এছাড়া, আজকাল প্রায় প্রত্যেক স্মার্টফোন গুলোতে স্ক্রিন কাস্ট করার একটি ফ্রি অ্যাপ আগের থেকেই দেওয়া থাকে। এছাড়া, আপনি চাইলে অ্যাপস স্টোর থেকে একটি ফ্রি স্ক্রিন কাস্ট অ্যাপ ডাউনলোড করে মোবাইল বা ল্যাপটপের স্ক্রিন নিজের স্মার্ট টিভিতে ডিসপ্লে করতে পারবেন।
৩. Netflix, Disney Plus, Amazon Prime Video
আপনি নিজের স্মার্ট টিভিতে Netflix, Disney Plus এবং Amazon Prime Video-এর থেকে নতুন নতুন মুভি এবং সিরিজ গুলো স্ট্রিম করতে চাইছেন ? চিন্তা নেই। বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ স্মার্ট টিভি গুলোতেই এই জনপ্রিয় অনলাইন স্ট্রিমিং অ্যাপ গুলো আগের থেকেই ইন্সটল করে দেওয়া হয়।
অবশই, আপনি চাইলে অন্যান্য OTT streaming অ্যাপস গুলিও ডাউনলোড করতে পারেন। সরাসরি অ্যাপ এর মইধ্যে লগইন করুন এবং একটি বড় HD স্ক্রিনে ওয়েব সিরিজ দেখার আনন্দ উপভোগ করুন।
৪. ওয়েব ব্রাউজ করুন
যেকোনো স্মার্ট টিভিতেই আপনি একটি built-in web browser পেয়ে যাবেন। অবশই, আপনি চাইলে আলাদা করে Google Chrome বা Firefox-এর মতো একটি জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার অবশই ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। এই ওয়েব ব্রাউজার ব্যবহার করে আপনি সরাসরি নিজের স্মার্ট টিভির থেকে ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে পারবেন। যেকোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা, গুগল সার্চ করা বা ভিডিও দেখা সবটা আরামে করে নিতে পারবেন।
৫. ইউটিউবে ভিডিও দেখুন
প্রায় প্রত্যেক স্মার্ট টিভিতেই YouTube App অবশই থাকে। আমরা প্রত্যেক দিন ইউটিউবে নানান ধরণের ভিডিও গুলো দেখে থাকে। তাই, কিছু শেখার জন্যে টিউটোরিয়াল ভিডিও হোক বা কোনো পুরোনো ছবি বা জানতে চাইছেন দেশ বিদেশের খবর, এখন বড় স্ক্রিনে আরামে দেখতে পারবেন ইউটিউব।
YouTube-এর মধ্যে যেকোনো বিষয়ে হাজার হাজার ভিডিও কনটেন্ট গুলো রয়েছে যেগুলো সম্পূর্ণ ভাবে ফ্রীতে দেখা যাবে। তাই, কেবল ইউটিউব অ্যাপ ব্যবহার করেই আপনি সম্পূর্ণ ফ্রীতে একটি বড় স্ক্রিনের মজা নিতে পারছেন।
৬. গান শোনো
Spotify-এর মতো music streaming Apps গুলো নিজের স্মার্ট টিভিতে ইনস্টল করার মাধ্যমে আপনি যেকোনো ধরণের গান গুলো টিভিতে শুনতে পারবেন। লক্ষ লক্ষ গান গুলো আপনারা পাবেন যেগুলো শোনা যাবে। আমার হিসেবে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে টিভিতে নিজের পছন্দের গান শোনার সুবিধাটি স্মার্ট টিভির একটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা গুলোর মধ্যে আরেকটি।
৭. সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার
অনেক সময় আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপটি আপনার কাছে থাকেনা, স্মার্টফোনটি ও কোনো কারণ বসত সামনে নেই। এক্ষেত্রে, সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলো ব্যবহার করতে মন হলে আপনাকে আর বসে থাকতে হবেনা। আপনি সরাসরি নিজের smart tv-র দ্বারা Facebook, Twitter এবং TikTok-এ লগইন করে ব্যবহার করতে পারবেন।
৮. মজার স্মার্ট টিভি গেম খেলুন
পুরোনো দিনের টিভির মতো একটি স্মার্ট টিভিতে আপনাকে সেই বোরিং সাপের স্নেক গেম খেলতে হবেনা। Sudoku থেকে Solitaire, Pac Man, temple run ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের স্মার্ট গেম গুলো খেলতে পারবেন নিজের টিভিতে। অবশই আপনি চাইলে নিজের পছন্দের গেম গুলো ডাউনলোড করে নিতে পারেন। যেমন, Asphalt 8: Airborne, Crossy Road, Dead Trigger 2, Into the Dead, Orbia, Hovercraft: Getaway, Badland, Zombie Age 2 ইত্যাদি।
৯. ভয়েস-কন্ট্রোল সুবিধা
Googe Assistant, প্রায় প্রত্যেক android smart tv গুলোতেই থাকে। এর দ্বারা আপনারা ভয়েস কমান্ড এর দ্বারা নিজের টিভি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। আপনার স্মার্ট টিভির রিমোটে থাকা Googe Assistant / (Microphone) বাটনটি ক্লিক করুন। রিমোট ছাড়া করতে হবে টিভির পাশে গিয়ে “Ok Google” বলুন।
কিছু কিছু স্মার্ট টিভিতে আবার Amazon’s Alexa ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট দেওয়া থাকে। এই ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকার কারণে আপনাকে রিমোটের বাটন টিপে টিপে টিভি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়না। নিজের ভয়েস এর সাহায্যে কম্যান্ড দিয়ে স্মার্ট টিভি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।