কিভাবে অপ্টিমাইজ করলে আপনার স্মার্টফোন ভালো পারফর্ম্যান্স দেবে? এখনকার জীবন স্মার্টফোন ছাড়া কল্পনা করাই অসম্ভব। কিন্তু, একটা সময়ের পর সব ডিভাইসের মতোই ফোনেরও পারফর্ম্যান্স খারাপ হতে থাকে। হয় স্টোরেজ কমতে থাকে, নাহলে সফটওয়্যারের সমস্যা হয় অথবা অতিরিক্ত ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেসিংয়ের জন্য ফোন ঠিকমতো চলে না।
তাই বলে, ডিভাইসের পারফর্ম্যান্স তো দিনদিন খারাপ হতে দেওয়া যায় না। আর সেই কারণেই, ফোনের ফাঙ্কশন ঠিক রাখতে মাঝেমাঝেই সেটাকে অপ্টিমাইজ করতেই হয়। খুব সহজেই সিম্পল কতগুলো স্টেপ ফলো করলেই আমার নিজেই অপ্টিমাইজ করতে পারবো। যা আমাদের স্মার্টফোনের স্পিড বাড়িয়ে তার কার্যক্ষমতাকেও বাড়িয়ে দেবে।
সূচিপত্র:
- স্মার্টফোন অপ্টিমাইজ করার উপায়গুলো কি কি?
স্মার্টফোন অপ্টিমাইজ করার উপায়গুলো কি কি?
নিজের অ্যান্ড্রয়েড ফোন লম্বা সময়ের জন্যে ব্যবহার করতে চাইলে অপ্টিমাইজেশান করাটা খুবই
জরুরি। এতে ফোনের ব্যাটারী, স্টোরেজ আর পারফর্ম্যান্স- তিনটিই দীর্ঘদিন ভালো থাকে। তাই, ফোন অপ্টিমাইজ করার সোজা টিপসগুলো নিচে দেওয়া রইল।
টিপস-১: ক্যাশে ফাইল ডিলিট করা:
বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ও ওয়েবসাইট দ্রুত ফাঙ্কশন করার জন্যে ফোন মেমোরিতে ক্যাশে ফাইল নামের অদরকারি টেম্পোরারি ফাইল জমাতে থাকে। সেই ফাইলগুলো অনেকটা জমে গেলে ফোন স্লো হয়ে যায়। তাই, প্রতিদিন ক্যাশে মেমোরি ডিলেট করলে, স্মার্টফোন ভালোভাবে পারফর্ম করে।
ফোনে ক্যাশে ফাইল ক্লিন করার পদ্ধতিটি কি?
অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ‘Settings’-এর অপশনে যান > Storage-এ যান > Cache Files> ‘Clean Up’-এ ট্যাপ করে ক্যাশে ক্লিন করুন।
টিপস-২: সফটওয়্যার আপডেট করা:
একটা স্মার্টফোন কতটা ভালোভাবে অপারেশন করবে সেই সবটাই নির্ভর করে তার সফটওয়্যারের উপর। সফটওয়্যার ফোনের সিক্যুরিটি ও পারফর্ম্যান্সের জন্যে খুবই জরুরি একটা বিষয়।
তাই, মোবাইলের সফটওয়্যারকে সবসময়েই ঠিকভাবে আপডেটেড রাখতে হয়। সফটওয়্যার আপডেটের মধ্যে বিভিন্ন বাগ ফিক্সিং, সিক্যুরিটি প্যাচ এবং পারফর্ম্যান্সও আপডেট করা হয়।
তাই, আপনি যদি ঠিকমতো ফোনের অ্যাপ্লিকেশন ও অপারেটিং সিস্টেমটাকে আপ-টু-ডেট রাখেন, তাহলে আপনার ফোন কখনোই স্লো হবে না।
আপডেট চেক করার উপায়:
‘Settings’-এ যান > ‘About Phone’-এ যান > Update-এর জন্যে চেক করুন > Update করার থাকলে,
আপডেট করুন।
টিপস-৩: আনইউস্ড অ্যাপ ডিলিট করা:
আমাদের ডিভাইসে এমন অনেক অ্যাপ্লিকেশন থাকে, যেগুলো আমরা ব্যবহারই করি না। আর সেগুলো কোনো কারণ ছাড়াই ফোনের স্টোরেজ আটকে রাখে। তাই, এমন সমস্ত অ্যাপগুলো ডিলিট করে ফোনের মেমোরি ক্লিয়ার রাখলে, ফোন ভালো পারফর্ম্যান্স
দেয়।
আনইউস্ড অ্যাপ আনইনস্টল করার প্রক্রিয়া:
Settings’ ওপেন করুন > Apps-এ যান > যেই অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবহার করেন না, সেগুলোকে ‘uninstall’-এ প্রেস করে ডিলিট করুন।
টিপস-৪: ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস কমানো:
এমন অনেক অ্যাপ্লিকেশন আছে, যেগুলো অটোম্যাটিকভাবে ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকে। যেকারণে ডিভাইসের ব্যাটারী লাইফ বিনা কারণে কমে যায় আর ফোন স্লো হয়ে পড়ে। তাই এই ধরণের অ্যাপগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস ডিসেবল বা রেস্ট্রিক্ট করে দিন।
ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ্লিকেশন ম্যানেজের উপায়:
‘Settings’-এ যান > Apps ওপেন করুন > Permissions-এ যান > Background Autostart-এ ট্যাপ করুন > যেই অ্যাপটি ব্যাকগ্রাউন্ডে রান করছে, সেটা অফ করুন।
টিপস-৫: স্টোরেজ স্পেস খালি করা:
আমাদের ফোন স্টোরেজ কমে যাওয়ার সমস্যাটা খুব বেশি। ছবি, ভিডিও ও আনইউস্ড ফাইল বেশি জমে গেলেই ফোন মেমোরি কমে গিয়ে পারফর্ম্যান্সের ক্ষতি হয়। তাই, আমাদের সবার আগে অপ্রয়োজনীয় ফাইল ও মিডিয়া ডিলিট করে দেওয়া উচিত।
ফোন মেমোরি খালি করার উপায়:
✔ পুরোনো বা ডুপ্লিকেট ফটো ও ভিডিও ডিলিট করা
✔ কোনো এক্সটার্নাল স্টোরেজ ডিভাইসে ফাইল/মিডিয়া স্টোর করা
✔ Google Drive/Photos-এর মতো ক্লাউড স্টোরেজে বড় ফাইলগুলো রাখা
টিপস-৬: ফোন রিস্টার্ট করা:
একটা স্মার্টফোন রিস্টার্ট বা রিবুট করলে, সেটার পারফর্ম্যান্স অনেকটাই স্মুথ হয়। নিয়মিত রিবুট করলে ডিভাইসের RAM ক্লিয়ার হয় এবং ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেসিংও বন্ধ হয়। যার ফলে ফোন অনেকটাই ফাস্ট কাজ করতে পারে। সপ্তাহে অন্তত একবার রিবুট করলে ডিভাইস ভালো থাকে।
ফোন রিস্টার্ট করার উপায়:
Power Button অনেকক্ষণ প্রেস করুন> এরপর স্ক্রিনে Power Off ও Restart/Reboot অপশন এলে Restart/Reboot বাটনে প্রেস করুন।
টিপস-৭: অ্যানিমেশন অফ করা:
ফোনে এক অ্যাপ্লিকেশন থেকে অন্য অ্যাপে যেতে গেলে একটা স্মুথ ভিজ্যুয়াল অ্যানিমেশন থাকে। এইগুলো দেখতে ভালোলাগলেও এগুলো আসলে ফোনকে স্লো করে। এই অ্যানিমেশনগুলো সেটিংস থেকে গিয়ে ডিসেবল করা যায়। এই টিপসটা পুরোনো স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে খুবই কাজে লাগে।
অ্যানিমেশন ডিসেবল করার উপায়:
Settings খুলুন > Animation লিখে সার্চ করুন > Remove Animation-এ ক্লিক করুন > Remove Animation বাটনটা এনেবেল করুন।
টিপস-৮: অ্যাপের lite ভার্সন ব্যবহার করা:
যদি আপনার স্মার্টফোনের বয়স অনেকটা বেশি হয়, তাহলে সেটা একটু স্লো কাজ করবেই। তাই, আপনি যদি ফোনে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের Lite ভার্সনগুলো ইউস করেন, তাহলে আপনার ফোন অনেকটাই বেটার পারফর্ম করতে পারে। কয়েকটা জনপ্রিয় লাইটার অ্যাপ্লিকেশন হল YouTube Go, Facebook Lite ও ইত্যাদি।
টিপস-৯: ক্লিনিং অ্যাপ ব্যবহার করা:
এখনকার বেশিরভাগ স্মার্টফোনেই নিজস্ব ক্লিনিং ও অপটিমাইজিং টুল থাকে। তবে, আপনি প্রয়োজনে Google প্লে Store-এর বিভিন্ন ক্লিনিং অ্যাপের সাহায্য নিতেই পারেন। এইরকমই কতগুলো বেস্ট ও কার্যকরী অ্যাপ্লিকেশন হল,
১. CCleaner:
সুবিধা:
- অ্যাপ্লিকেশন রিভিউ করে,
- ডুপ্লিকেট ফাইলস অটো-ডিটেক্ট করে,
- ফটো সাইজ রিডিউস বা কমাতে পারে।
অসুবিধা:
- ফ্রি ভার্সনে অ্যাড আসে,
- মাঝে মাঝে স্লো হয়ে যায়,
- লিমিটেড অ্যাডভান্স ফিচার রয়েছে।
২. Junk Cleaner:
সুবিধা-
- অ্যাপ লক ফিচার,
- ব্যাটারি ইনফো ও জাঙ্ক ক্লিনিং ফিচার,
- অ্যান্টি-ভাইরাস ও সিক্যুরিটি টুল আছে।
অসুবিধা-
- সিস্টেম একটু স্লো করে,
- অনেকসময় ফাইল আইডেন্টিফাই করে না।
৩. Phone Cleaner – AI Cleaner:
সুবিধা-
- সহজেই জাঙ্ক ফাইল মুছে ফেলে,
- আলাদা হোয়াটস্যাপ ক্লিনিং টুল আছে,
- AI টুল অটোম্যাটিকভাবে অপ্টিমাইজ করে।
অসুবিধা-
- ইম্পরট্যান্ট ফাইল ডিলিট হওয়ার রিস্ক আছে
লাস্ট অপশন: ফ্যাক্টরি রিসেট:
যদি উপরের কোনো টিপসেই কাজ না হয়, তাহলে শেষ উপায় হিসেবে ফ্যাক্টরি রিসেটই আপনার ফোনকে ঠিক করতে পারবে। এই সেটিংয়ে ফোনের যাবতীয় ডেটা পার্মানেন্টভাবে মুছে গিয়ে ফোনটি তার অরিজিনাল সেটিংয়ে ফিরে যাবে।
তবে, এখানে আপনার ডেটার ব্যাকআপ নেওয়া না থাকলে কিন্তু ডেটা আর ফিরে পাবেন না। তাই, এই পদ্ধতি ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডিভাইসে ব্যাকআপ নিয়ে নেবেন।
ফ্যাক্টরি রিসেটের উপায়:
‘Settings’-এ ক্লিক করুন > About Phone-এ যান > Factory Reset ওপেন করুন > Erase all data বাটনে প্রেস করুন।
অবশই পড়ুন: