মিউচুয়াল ফান্ডের সুবিধা (Advantages of mutual fund in Bengali) গুলো কি কি বা কেন মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করব ? এই বিষয়ে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি।
আপনি কি কোনো সাইড ইনকামের রাস্তা খুঁজছেন ?
কিংবা, রোজগারের রাস্তা হিসাবে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের কথা ভাবছেন ?
তাহলে, আপনি একদম সঠিক জায়গাতেই এসেছেন, কারণ আমরা আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করতে চলছি, মিউচুয়াল ফান্ডের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা গুলো নিয়ে।
চলুন, প্রথমে আমার চট করে বুঝে নিই যে, মিউচুয়াল ফান্ড কি ?
আসলে, Mutual Fund হল এক ধরণের বিনিয়োগকারী বাহন বা কোম্পানির মতো।
যেটি সাধারণত নানান কোম্পানির স্টক, বন্ড বা অন্যান্য সিকিউরিটি সংক্রান্ত পোর্টফোলিও নিয়ে গঠিত হয়ে থাকে।
এই ধরণের মিউচুয়াল ফান্ডগুলো তার ছোট কিংবা স্বতন্ত্র বিনিয়োগকারীদের কম মূল্যে বৈচিত্রপূর্ণ ও পেশাদারিত্বের সাথে পরিচালিত পোর্টফোলিওগুলোকে অ্যাক্সেস করার সুযোগ করে দেয়।
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা কি নিরাপদ ?
অন্যান্য সমস্ত সিকিউরিটিজের মতো মিউচুয়াল ফান্ড গুলোতে কম-বেশি বিনিয়োগ-সংক্রান্ত ক্ষতির সম্ভাবনা থেকেই যায়।
তবে, এই যৌথ পুঁজির লক্ষ্য থাকে যে, বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের ঝুঁকিটাকে অনেকটা কমিয়ে ফেলা।
তাই, এই ফান্ডগুলো প্রায়শই এর বৈচিত্র্যপূর্ণ বিনিয়োগের ধরণের জন্যে অন্যান্য ধরণের বিনিয়োগের তুলনায় কম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে।
সেই কারণেই, মিউচুয়াল ফান্ডকে অনেকেই যথেষ্ট নিরাপদ ও কম জটিল বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।
আর, ভারতের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (SEBI) সমস্ত মিউচুয়াল ফান্ডগুকে শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
এছাড়া, প্রত্যেকটা মিউচুয়াল ফান্ডকে মার্কেটে কোনো স্কিম চালু করার পূর্বে SEBI নিবন্ধন (রেজিশ্ট্রেশন) লাভ করতে হয়।
অতএব, আপনার অর্থ নিয়ে কোনো পুঁজি কেন্দ্রই গায়েব হয়ে যেতে পারবে না।
আর, এই শর্তাবলীগুলো যৌথ পুঁজির ঋণের সাথে সম্পর্কিত স্ট্যান্ডার্ড ঝুঁকি, ইক্যুইটি ও এমএফগুলোর জন্যও একইভাবে প্রযোজ্য।
তাই, এখানে বিনিয়োগ করার সম্পর্কে সর্বদা নিশ্চিন্তে থাকুন।
মিউচুয়াল ফান্ডের সুবিধা:
আপনাদের মনে যদি প্রশ্ন থাকে যে, আমরা কেন মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করব ?
তবে, এক্ষেত্রে আপনাদের যৌথ পুঁজিতে বিনিয়োগের সুবিধা গুলো জেনে রাখা প্রয়োজন।
মূলত, মিউচুয়াল ফান্ডগুলো বিনিয়োগের একটা বৈচিত্রপূর্ণ পোর্টফোলিও তৈরি করতে সবচেয়ে সেরা, সহজ ও নমনীয় উপায়গুলো আপনাকে দিয়ে থাকে৷
ভারতের মতো দেশে, নানান ধরণের মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে; যা বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা অনুসারে নানান অপশন প্রদান করে থাকে।
চলুন তাহলে, আমরা জানি যে, মিউচুয়াল ফান্ডগু লোতে বিনিয়োগ করার প্রধান সুবিধাগুলো সম্পর্কে –
১. পেশাদারি পরিচালনা:
যৌথ পুঁজিতে বিনিয়োগ করার একটা বড় সুবিধা হল এই যে, এটি সম্পূর্ণভাবে যোগ্য, অভিজ্ঞ ও পেশাদার আর্থিক বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত হয়।
এই বিশেষজ্ঞরা একটা নিবেদিত বিনিয়োগ গবেষণা দলের দ্বারা সমর্থিত।
এরা বিনিয়োগকারীদেরকে বিভিন্ন কোম্পানিগুলোর কর্মক্ষমতা, সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করে দিয়ে উপযুক্ত বিনিয়োগটাকে নির্বাচন করতে সাহায্য করে।
২. বৈচিত্রপূর্ণ পোর্টফোলিও:
এই বিনিয়োগের প্রধান নিয়মের মধ্যে অন্যতম হল – বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও গুলোকে বৈচিত্র্যময় করে তোলা।
তাই, নিজের পোর্টফোলিওকে বৈচিত্র্যময় করে তোলার জন্যে মিউচুয়াল ফান্ড হল একদম সহজ ও সফল উপায়।
এরা বিনিয়োগকারীদের ইন্ডাস্ট্রি ও সেক্টরের মধ্যে বহু সংখ্যক বাছাই করা সেরা কয়েকটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করে।
যে কারণে, বিশাল বৈচিত্রের জন্যেই এই ফান্ডে বিনিয়োগ করা অনেক কম ঝুঁকিপূর্ণ।
আর, এখানে খুব কম ক্ষেত্রেই একসাথে সমস্ত স্টক একই অনুপাতে লোকসান করে।
তাই, আপনি বিনা সন্দেহে এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন।
৩. সুবিধাজনক প্রশাসন:
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে আপনাকে অনেক কম কাগজপত্র ফিল বা জমা করতে হয়।
তাই, এখান থেকে আপনি বিনিয়োগ ও লাভ-সংক্রান্ত নানান সমস্যা সহজেই এড়িয়ে যেতে পারেন;
যেমন – বিলম্বিত অর্থ প্রদান, খারাপ ডেলিভারি, ব্রোকার ও কোম্পানির সাথে অবাঞ্ছিত হিসেব মেলানো ও ইত্যাদি।
তাই, বিনিয়োগের বিষয়ে মিউচুয়াল ফান্ড আপনার যথেষ্ট সময় বাঁচায় আর বিনিয়োগকেও যথেষ্ট মসৃণ করে তোলে।
৪. উচ্চতর রিটার্নের সুবিধা:
যেহেতু, মিউচুয়াল ফান্ড নির্বাচিত সিকিউরিটি গুলোর মধ্যে বৈচিত্র্যময় কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে থাকে।
তাই, আপনি মাঝারি থেকে দীর্ঘমেয়াদী যেকোনো বিনিয়োগ থেকেই যথেষ্ট উচ্চতর রিটার্ন আশা করতে পারেন।
৫. কম খরচসাপেক্ষ:
অন্যান্য বহু বিনিয়োগের অপশানের মধ্যে খরচের দিক থেকে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো হল সেরা।
ক্যাপিটাল মার্কেটে সরাসরি বিনিয়োগের যে খরচ, তার তুলনায় যৌথ পুঁজিগুলো তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম ব্যয়বহুল হয়।
কারণ, এখানে বিনিয়োগকারীদের জন্য কম খরচে হেফাজত, ব্রোকারেজ, ও অন্যান্য ফি-এর সুবিধাগুলো দেওয়া হয়ে থাকে।
৬. সর্বনিম্ন লক-ইন সময়কাল:
ট্যাক্স বাঁচানোর জন্যে মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বনিম্ন লক-ইন সময়কাল হল মাত্র ৩ বছর।
যেখানে, এফ.ডি, ইউএলআইপি, কিংবা পি.পি.এফ-এর মতো অন্যান্য ট্যাক্স বাঁচানোর বিকল্পগুলোর জন্য সর্বাধিক ৫ বছরের তুলনায় একটা যথেষ্টই কম।
এছাড়াও, লক-ইন পিরিয়ড শেষ হয়ে গেলেও, আপনি বিনিয়োগে নিযুক্ত থেকে যেতে পারেন আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী।
৭. স্বচ্ছতা:
আপনি আপনার অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্টের সাহায্যে আপনার বিনিয়োগের মূল্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ রাখতে পারেন।
এছাড়াও, পোর্টফোলিওর মাধ্যমে আপনার করা বিনিয়োগের স্কিমের নিয়মমাফিক তথ্যও পাবেন।
যেটা আপনার সম্পদের প্রতিটি শ্রেণিতে বিনিয়োগ করা অনুপাতগুলোকে নির্দেশ করে দেবে।
স্কিম সম্পর্কিত তথ্যগুলো আপনার প্রতিটি স্কিমের জন্য বিস্তারিত বিনিয়োগ কৌশল ও বরাদ্দ সম্পদও নির্দিষ্ট করে দেয়।
৮. নমনীয়তা:
প্রতিদিনের বিনিয়োগ পরিকল্পনা, নিত্যদিনের প্রত্যাহার পরিকল্পনা ও লভ্যাংশ পুনঃবিনিয়োগের মতো পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য গুলোর সাহায্যে, আপনি আপনার ইচ্ছেমতো পদ্ধতিগতভাবে বিনিয়োগ বা লভ্যাংশ তুলে নিতে পারেন।
৯. বিভিন্ন ধরণের স্কিম:
আপনি নিজের চাহিদার সাথে মিলে যাচ্ছে, এমন মিউচুয়াল ফান্ড স্কিম সহজেই খুঁজে পেতে পারেন; যা আপনার বিনিয়োগের চাহিদাকে সহজেই মিটিয়ে দিতে পারে।
তবে, এই স্কিম বাছাটা সম্পূর্ণভাবেই আপনার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা ও বিনিয়োগের মাত্রার উপর সরাসরি নির্ভর করে।
১০. ভালোভাবে নিয়ন্ত্রিত:
সব মিউচুয়াল ফান্ডগুলো SEBI দ্বারা নিবন্ধিত।
এই সেবীর নিয়ন্ত্রণে ফান্ডগুলো বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রণীত নিয়ন্ত্রক নীতিবলীর মধ্যে কাজ করে।
তাই, মিউচুয়াল ফান্ডের কার্যক্রম নিয়মিতভাবে সেবি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পর্যবেক্ষিত হয়।
যাতে, বিনিয়োগকারীদের সমস্ত রকমের স্বার্থরক্ষা করা হয়।
১১. ট্যাক্স বাঁচানোর অন্যতম সেরা বিকল্প:
আয়কর আইনের ধারা 80C এর অধীনে, ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ড স্কিম, যথা- ইক্যুইটি লিঙ্কড সেভিং স্কিম (ইএলএসএস) প্রতি আর্থিক বছরে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড় দিতে পারে।
এই ইএলএসএস (ELSS) হল এক ধরণের ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ড; যেটা নানান কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে থাকে।
এছাড়া, এক বছরের বেশি সময় ধরে বিনিয়োগ করা কোনো ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের মূলধনের উপর, যদি একটি আর্থিক বছরে এক লক্ষ টাকার কম লাভ থাকে, তাহলে আপনাকে সেখানে কোনোরকমের কর দিতে হয় না।
১২. বিনিয়োগের আগে অতীতের কর্মক্ষমতা পর্যালোচনা করা সম্ভব:
কোনো কোম্পানির অতীতের পারফরম্যান্স দেখে আপনি সেই কোম্পানির হাল-হকিকত জানতে পারবেন।
যাতে করে, আপনি স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে, একটি ফান্ড / স্কিম এখনও পর্যন্ত কীভাবে কাজ করেছে।
এইভাবে আপনি এমন কোনো ফান্ড / স্কিম খুঁজে বের করতেই পারেন, যার ঝুঁকির পরিমাণ কম, অথচ ভাল রিটার্ন পাওয়ারও আশা রয়েছে।
কিন্তু, এটাও মনে রাখবেন যে, মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে অতীতের পারফরম্যান্স দেখে কখনই ভবিষ্যতের পারফরম্যান্স সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পাওয়া যায় না।
আপনার মনে যদি, মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করার ব্যাপারে কোনোরকমের প্রশ্ন থাকে – তবে নিম্নে উল্লেখিত বিষয়গুলো সবার আগে বিবেচনা করে নিন –
১. আপনি কি আপনার স্টক নিজেই বাছাই করতে পছন্দ করেন ?
কিংবা, আপনার নিজস্ব পোর্টফোলিও নিজেই পরিচালনা করতে চান ?
নাকি, আপনি এই দুটি দ্বায়িত্বই একজন আর্থিক বিশেষজ্ঞের উপর ছেড়ে দেওয়া পছন্দ করবেন ?
২. আপনার বিনিয়োগের লক্ষ্যগুলো কী ?
আর, আপনার বিনিয়োগের জন্যে নেওয়া সিদ্ধান্ত কিভাবে আপনার মিউচুয়াল ফান্ডকে প্রভাবিত করবে ?
পরিশেষে:
বহু সংখ্যক বিনিয়োগকারীরাই সরাসরি তাদের নিজস্ব পোর্টফোলিও পরিচালনা করার পরিবর্তে, মিউচুয়াল ফান্ডকেই বেশির ভাগ সময়ে বেছে নেন।
কারণ, পৃথক পৃথক স্টক ক্রয়ের তুলনায় মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা অনেকটাই বেশি সহজ, সস্তা, বৈচিত্র্যপূর্ণ ও বিনিয়োগকারীদের অধিক সুবিধা দিয়ে থাকে।
আমাদের আজকের মিউচুয়াল ফান্ডের সুবিধা নিয়ে লেখা আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হল।
লেখাটি পছন্দ হলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।
এছাড়া, আমাদের আজকের আর্টিকেলটি social media platform গুলোতে share করার জন্য আপনার কাছে অনুরোধ জানালাম।